আমাদের পটকা মামাটা ভীষণ বোকা সে কী বোকা রে বাবা! বলে শেষ করা যাবে না। সেদিন ঘটে গেল এক মহাকাÐ। পটকা মামার মহানুভবতার কাÐ। সেদিন এক ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাইল পটকা মামার কাছে। নরম সুরে পটকা মামাকে ডাকল। সাথে হালকা করে মায়াকান্নাও কাঁদল। ব্যস, পটকা মামার মনঃ কাঠি লাগানো আইসক্রিমের তো নিমিষেই গলে গেল ফকির চাইল ভিক্ষা আর পটকা মামা ফকিরকে পুরো ত্রিশ কেজি চালের বস্তাটাই দিয়ে দিল বস্তা ভরা চাল পেয়ে অমনি ফকিরও উধাও। এই হলো আমাদের দরদি বোকা পটকা মামা।
এসবে পটকা মামা বোকা হতে পারে কিন্তু দাবা খেলায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। খেলাধুলায় তার আলাদা নাম আছে সে কী দাবা খেলে রে বাবা! আশেপাশের এলাকার কেউই পাত্তা পায় না মামার কাছে। টানা চারবারের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খেতাবও আছে। আশেপাশের এলাকার সবাই তো মামাকে পটকা গ্রান্ডমাস্টার বলে ডাকে! আমরা অবশ্য পটকা মামাই বলে ডাকি।
পটকা মামার কোনো কাজকর্ম নেই। সারাদিন শুধু টইটই করে ঘুরে বেড়ানোটাই তাঁর কাজ। আজকে পটকা মামা বাসায় আসার পর থেকে কেমন জানি চিন্তিত মনে হলো। যে পটকা মামা নানুর ঘরে দিনে একবারের জন্যও যায় না, সেই পটকা মামাই আজ বেশ কয়েকবার নানুর ঘরে আসা-যাওয়া করতে দেখা গেল। আমার বিষয়টা কেমন জানি খটকা লাগতে শুরু করল। মনে মনে বিরাট কোনো একটা রহস্য লুকিয়ে আছে এর পেছনে। রহস্য সমাধানের জন্য এক দৌড়ে পটকা মামার ঘরে গিয়ে হাজির! মামা জানালার গ্রিল ধরে কী যেন ভাবছে। আমাকে দেখতে পেয়ে বলে উঠল- কি রে তুই কখন এলি?
আর একটু আগেই। তুমি তো খেয়ালই করো নাই আচ্ছা, মামা তুমি কী কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত?
আরে কি যা-তা বলছিস। একদমই না।
তোমাকে দেখে কিন্তু তেমনটা মনে হচ্ছে না। তুমি কি আমার কাছে কোনো কিছু লুকাচ্ছ?
ইয়ে মানে, একটা গোপন কথা কাউকে বলবি না বল?
আমাকে কি তোমার বিশ্বাস হয় না? অবশ্যই হয়। এটা অনেক গোপন। কাউকে বলবি না কিন্তু। কী গোপন কথা আগে বলো দেখি?
আচ্ছা শোনো, আজকে বনের ভিতরে হাঁটার সময় একজন সাধুবাবাকে দেখতে পেলাম। আগুনের মাঝখানে বসে আছে আর কী কী যেন মন্ত্র পাঠ করছে। হঠাৎ করেই আমার নাম ধরে ডাকল। আমি তো অবাক। কাছে যেতেই আমার পুরো গোষ্ঠীর বর্ণনা দিলো
সাধুবাবা? তা-ও আবার দিনের বেলা?
হ্যা রে হ্যা।
আর কী বলেছে?
আমার জন্য নাকি কোনো গুপ্তধন অপেক্ষা করছে?
কোথায়?
সেটা তো বলেনি। আজকে বলতে চেয়েছে। তবে একটা শর্তে?
কী শর্ত? দুই ভরি স্বর্ণ নিয়ে যেতে হবে তার কাছে কী তাহলেই সাধুবাবা গুপ্তধনের রহস্য উন্মোচন করবে?
তা তুমি কী করবে ভাবছ?
সেটাই তো ভাবছি রে। মায়ের তো চার ভরি স্বর্ণ আছে। ওখান থেকে দুই ভরি নিয়ে যাব ভাবছি।
এমন কাজ করিও না মামা। ওটা কোনো নকল সাধুবাবা হয় তো। তোমাকে ঠকাতে যাচ্ছে।
না না, উনি কোন নকল সাধুবাবা নয়। উনি আসলেই সাধুবাবা। সাধুবাবা না হলে কি আর আগুনের মাঝখানে বসে থাকা যায় রে?
যায় মামা যায়। এই ডিজিটাল যুগে সব কিছুই করা যায়। তা স্বর্ণ কি তুমি সত্যিই নিয়ে যাবে?
হ্যাঁ। তুই কিন্তু কাউকে বলবি না প্রতিজ্ঞা করেছিস।
আমিও সেদিন মামায় কথায় কেন জানি গুপ্তধনের বিষয়টা বিশ্বাস করা শুরু করলাম।
রাত হলো। চারদিক সুনসান। পটকা কখন যে নানুর স্বর্ণ নিয়ে সাধুবাবার কাছে গেছে কারোই নজরে আসেনি।
ওদিকে পটকা স্বর্ণ নিয়ে হাজির সাধুবাবার কাছে সাধুবাবাকে বলল- বাবা আমি দুই ভরি স্বর্ণ নিয়ে এসেছি। এবার আমাকে গুপ্তধন রহস্যের সমাধান করে দিন।
শান্ত হও পটকা। ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করো। জোরে জোরে শ্বাস ছাড়তে থাকো। যখনই তোমার ঘুম আসবে ঠিক কিছুক্ষণ পরেই তুমি গুপ্তধনে রহস্যের সমাধান পেয়ে যাবে
পটকা জোরের জোরে শ্বাস ছাড়তে থাকে। একসময় পটকার খুব ঘুম আসে। ঘুমের মধ্যেই পটকা দেখে, সাধুবাবা আর ও গুপ্তধনের শহরে ঢুকে পড়েছে। সেখানে এক কলস হীরা জহরতের মোহর চকচক করছে। যেই পটকা ধরতে যাবে ঠিক তখনই সাধুবাবা মোহর ভর্তি কলস খপ করে নিয়ে নেয়। মোহর ভর্তি কলস নিয়ে সাধুবাবা মিলিয়ে যেতে থাকে। পটকা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতে থাকে। জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকে আমার গুপ্তধন। আমার গুপ্তধন।
হঠাৎ পটকার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলতেই সে নিজেকে তার বিছানায় আবিষ্কার করল। তাকে ঘিরে বাড়ির সকলে। পটকা হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। আর বলল মা, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি বুঝতেই পারিনি উনি নকল সাধুবাবা। আমি এত বোকা কেন?
নানুভাইও কান্না চোখে বলল স্বর্ণ নিয়ে গেছে তো কী হয়েছে? তোর কিছু হয়নি এটাই তো খোদার কাছে হাজার শুকরিয়া।
পটকা মামা নানুভাই জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকল। একসময় পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ হয়ে যায়।
ফকির পাড়া, দিনাজপুর
পটকা মামার গুপ্তধন
শাকিব হুসাইন