রিজওয়ান, সেই ক্লাসের টপক্লাস বেয়াদব ছেলেটি আজ বিশাল এক সফল ব্যবসায়ী। কোটি কোটি টাকার মালিক। আর এর সবই সম্ভব হয়েছে নোনাজলের কারণে। নোনাজলই ছিল তার সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় প্রেরণা। নবম ক্লাস অবধি রিজওয়ান ছিলো সেরা বাউ-ুলে। কোনো ভালো কাজে কেউ কখনো তাকে পায়নি। স্কুলে যত রকমের খারাপ কাজ হতো সবই তার দ্বারা সংঘটিত হতো। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়ানোই ছিল তার মূল কাজ। এমনকি সিগারেটও খেতো। ভাবাই যায় না ক্লাস নাইনের একটা ছেলে রীতিমতো বিড়িখোর। সুযোগ পেলে মেয়েদের বাজে কমেন্ট করাও কখনো ছাড়েনি। ক্লাসের দুর্বল ছেলেদের ভয় দেখিয়ে টাকা হাতানো তাদের টিফিন কেড়ে নেয়া ছিল নিত্যদিনের সাধারণ ব্যাপার। ভয়ে কেউ কখনো তার নামে স্যারেদের কাছে নালিশও করত না। কিন্তু এগুলো স্যারদের চোখ ফাঁকি দিত না। প্রায়ই স্যাররা তার মাকে ডেকে এনে বিচার দিত নানানভাবে অপমান অপদস্থ করত এতে ওর কিছু যায় আসত না। কারণ সবই তো তার মায়ের ওপর দিয়ে যেত। দুষ্টু ছেলেদের যেমন লজ্জা থাকে না, ঠিক সেও এর বিপরীত নয়। এসব বিচার সালিশ যেন তার এই কান দিয়ে ঢুকত আর ওই কান দিয়ে বের হয়ে যেত। লেখাপড়ায় ভালো হওয়া তো বহু দূর। তাই বরাবরই ক্লাসে টপার ফেইলার পার্সন ছিল। তবে প্রতি বছরই তার মায়ের আবদারে ক্লাসে উঠানো হতো। আর সবই ছিল তার কাছে স্বাভাবিক বিষয়। ধীরে ধীরে দুষ্টামির মাত্রাটা বেড়ে একটা চরম পর্যায় চলে যায় অতিরিক্ত পর্যায়ে। স্কুলের ছাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার করার দুঃসাহসও দেখিয়ে ফেলে। যথারীতি, হেড স্যারের কাছে নালিশ যায়, বিরাট আকারে। বিষয়টাকে প্রতিবারের মতো এবারও স্বাভাবিক ভেবেছিল সবাই, কিন্তু যা ঘটল তা তার কল্পনাতীত। মাকে ডাকা হলো। সে ভেবেছিল প্রতিবারের মতো এবারও তার মা ক্ষমা চেয়ে তাকে বাঁচিয়ে দেবে, কিন্তু তার মা যা বলল তা সে শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না একেবারেই।
Ñ এটা ঠিক আমার সন্তান কি না জানি না তবে একটা পশুর সমতুল্য হয়েছে। একজন সাধারণ জনগণ হিসেবে ওর যোগ্য শাস্তি দাবি করছি কথাটার শোনার পর আতঙ্কে যেন তার হাতপা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায়, শুকিয়ে যায় কলিজার পানি। কিছুই যেন বুঝে উঠতে পারছিল না। ভয়ে মাথা নিচু করেছিল একটু সাহস করে ওর মায়ের চোখের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল মায়ের চোখের কোণে চিকচিক করা নোনাজল। বুকের ভেতর যেন আর একবার ধক করে উঠে হৃদস্পন্দন যেন বন্ধ হয়ে আসার উপμম। আমাকে পুলিশে দেয়ার সিদ্ধান্ত মাÑই নিলেন। কিন্তু স্যার তা করলেন না বললেন তারা নিজেরাই এর শাস্তি দেবেন, ছোট ছেলেকে পুলিশে দেয়া দরকার নেই।
তাকে কিছু শাস্তি দেয়া হলো। সে এক বিন্দু শব্দটুকুও করেনি। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তার মায়ের চোখ থেকে ঝরে পড়া নোনাজলের দিকে। তার শরীরের ভেতর করার চেয়ে বেশি যন্ত্রণা পাচ্ছিল তার মায়ের চোখে নোনালজ দেখে। হৃদয়টা যেন দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছিল এক পর্যায় তার মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। আর তার পর তারও কিছু খেয়াল নেই। যখন চোখ খোলে তখন সে হাসপাতলে। সেদিন বুঝতে পেরেছিল মায়ের সামনে তার ছেলেকে যদি কোনোরকম শাস্তি দেয়া হয়, সেটা মায়ের জন্য কেমন হতে পারে? সেদিনই সে প্রতিজ্ঞা করেছিল জীবনে আর কখনো তার মায়ের চোখে জল আসতে দেবে না। সেদিনের সেই নোনাজলই তাকে পাল্টে দিয়েছিল। জীবনের মানে শিখেছিল সেদিন। এর পর থেকেই মায়ের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যায় রিজওয়ান।
নোনাজল
হাসিবুল হাসান রাকি