তিন বছর আগের কথা।
যখন আমরা চর্তু শ্রেণিতে পড়ি। আমরা তাসফীন, নাহিদ, শামিম ও জিহাদ অনেক ভালো বন্ধু ছিলাম। আমরা সব সময় এক সাথে খেলাধুলা করতাম। আমাদের জীবনে একটা ঘটনা সারা জীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ঘটনাটা হলো আমরা একদিন একটা পুরাতন বাড়ির উঠানে খেলতে গিয়েছিলাম। বাড়িটা দেখে মনে হয় ২০০-৩০০ বছর আগের। যাই হোক আমরা খেলছিলাম। আমি শামীমকে বললামÑ বন্ধু তুই স্ট্যাম্পগুলো বসা আমরা ব্যাট বল নিয়ে আসছি। শামীম বলল, আচ্ছা আমি স্ট্যাম্প বসাই তোরা তাড়াতাড়ি আসিস। এই বলে সে স্ট্যাম্প বসাতে শুরু করল। সে চেষ্টা করছে কিন্তু স্ট্যাম্প বসছে না। সে বারবার চেষ্টা করছে কিন্তু বসছেই না। তখন আমরা সবাই আসলাম। আমি শামীমকে জিজ্ঞেস করলাম স্ট্যাম্প বসাসনি কেন? সে বলল অনেকবার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারিনি। তখন আমি বললাম আমাকে দে আমি চেষ্টা করে দেখি। আমিও অনেক বার চেষ্টা করলাম কিন্তু স্ট্যাম্প বসাতে পারলাম না। তখন আমাদের বুদ্ধিমান বন্ধু নাহিদকে বললাম এটার একটা ব্যবস্থা করতে। সে একটু ভাবলো এবং সে জিহাদকে বলল মাটি খুঁড়তে। সে মাটি খুঁড়তে শুরু করল। তারপর সে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে একটা পলিথিনের ব্যাগ পেল। সে পলিথিনের ব্যাগটা বের করল। তারপর সে দেখতে পেল পলিথিনের ব্যাগের ভেতরে একটা কাগজ। তারপর সবাই পলিথিনের ব্যাগ থেকে সেই কাগজটা খুলল। কিন্তু আমরা এই কাগজের কোনো সুত্রই খুঁজে পেলাম না।
তখন নাহিদ এর সূত্রটা বুঝতে পারল। এটা কোনো একটা বাড়ির ম্যাপ। তখন আমরা তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসি। আমাদের বাড়ির পাশের একজন কাকা ছিল। সে অনেক ইতিহাস সম্পর্কে জানে। তাই আমরা তাকে প-িতকাকা বলে ডাকি। আমরা সবাই উনার কাছে ছুটে গেলাম এবং তাকে আমাদের পাওয়া ম্যাপটি দিলাম। তখন তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করলেন তোমরা এই পুরাতন ম্যাপ কোথায় পেয়েছো। আমরা সব কথা তার কাছে খুলে বলি। তিনি বললেন তোমরা যে বাড়ির উঠানে খেলাধুলা কর সেটা একটা রাজার বাড়ি। তখন তিনি আমাদের পুরো রহস্যটা খুলে বললেন। অনেক অনেক দিন আগের কথা। সেই রাজার বাড়িতে একদিন একটা ঘটনা ঘটেছিল। সেটা অনেক হতাশাজনক। রাজার বাড়িতে অনেক অনেক সোনা-দানা ছিল। একদিন রাজা খুব অসহায় হয়ে পড়লেন। তখন তার কাছে সামান্য কিছু টাকা পয়সা ছিল। তিনি এগুলো দিয়ে চোর ধরার জন্য কিছু গোয়েন্দাকে দায়িত্ব দিলেন। রাজা মারা যাবার পর তারা সবাই চোরের সন্ধান করা বন্ধ করে দেয়। তারা তাদের নিজের কাজে মন দেয়।
তখন আমরা মনস্থির করলাম আমরাই চোরের সন্ধান করব। তখন প্রায় রাত নয়টা বাজে। আমরা তখন সবাই সবার বাড়িতে গিয়ে খাবার খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। সকাল হলো। সকালে আমরা সবাই এই রহস্যটার সন্ধানে বের হলাম। বের হবার সময় আমরা মা-বাবার কাছে বন্ধুর বাড়ি যাব বলে বের হয়েছিলাম। সত্যি বললে হয়তো রহস্যটা বের করতে পারতাম না। রহস্যটা রহস্যই থেকে যেত। আমরা রওয়ানা হলাম ওই রাজার বাড়িতে। আমরা সবাই অনেক কৌতুহল ও ভয়ে আছি। তখন আমরা গেইট টপকে ভেতরে ঢুকলাম। তখন হঠাৎ আচমকা একটা শব্দ হলো। ওহ এটা গেইটের শব্দ। আমরা ভেতরে ঢুকে পড়ি। আমরা প্রমে দরজার সামনে যেতে না যেতেই দরজা খুলে যায়। অবশ্য এটা অস্বাভাবিক নয়। কারণ রাজার বাড়ি তো। ভেতরে অনেক অন্ধকার। আসার সময় নাহিদ ও জিহাদ লাইট নিয়ে এসেছিল। তখন আমরা ভয়ে ভয়ে এগোচ্ছি। কথা না বলে আমরা রাজার ঘরে ঢুকি। মাকড়সার জালে ভরা ঘরটা। তখন আমরা দেখলাম রাজার বিছানাটা। সেখানে আমরা আর একটা ম্যাপ পেলাম। এটার সাথে আগের ম্যাপের কোনো মিল নেই এটা বুঝতে আমাদের কষ্ট হলো না। তখন হঠাৎ জিহাদ রহস্য পেয়েছি বলে চিৎকার দিয়ে উঠল। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম কী পেয়েছিস? সে বলল প-িত কাকা বলেছিল রাজা তার সোনাদানার জায়গায় একটা ম্যাপ পায়। আমার মনে হয় চুরি করার সময় হঠাৎ ম্যাপটা পকেট থেকে পড়ে যায়। তখন আমরা বুঝতে পারলাম রহস্য হাতে পেতে আর দেরি নেই।
আমরা সবাই ম্যাপ অনুসারে আরেকটা পুরানো বাড়ি পেলাম ঠিক রাজার বাড়ির মতোই। শুধু পার্থক্য নামে। তখন আমরা এর ভেতর ঢুকলাম। এ সময় আমরা কিছু একটা অনুভব করছি। তখন আমরা দুটি চোখ দেখলাম। শামীম ও নাহিদ তা দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে তাদের জ্ঞান ফিরিয়ে এইটা একটি বিড়াল বলে তাদের ভয় ভাঙালাম। হঠাৎ হিজাদ চিৎকার দিয়ে উঠল। বলল সে দুইটি কঙ্কাল দেখেছে। হ্যাঁ জিহাদ ঠিকই বলেছে, এটা আমার জীবনের প্রম। কঙ্কালগুলোর সাথে পেলাম একটা চিঠি। চিঠিতে লেখা ‘জানি কেউ না কেউ এখানে আসবে। আমরা খাবারের অভাবে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরাই সেই রাজার ধন-সম্পদ চুরি করেছি। আমরা ভয়ে এ বাড়ি থেকে বের হইনি। কারণ যদি আমরা ধরা পড়তাম তাহলে আমাদের ফাঁসি হতো। তখন আমাদের জন্য আমাদের পরিবারে অপমান হতো। আমরা অনেক গুনাহ করেছি। এই ঘরের দুই নম্বর আলমারিতে আছে সেই সোনাদানা। আলমারির ওপরে আছে এর চাবি। এগুলো রাজার কাছে পৌঁছে দেবেন রাজা যদি মারা যায় তবে সোনাদানা সেবাকেন্দ্রে পৌঁছে দেবেন। আমার মনে হয় এই উছিলায় আল্লাহর শাস্তি থেকে ক্ষমা পাব। এই চিঠিটা পড়ে আমরা কষ্ট পেলাম। তখন আমরা সব কিছু নিয়ে রাজবাড়ি থেকে বের হয়ে তাদের কথামতো সোনাদানা সেবাকেন্দ্রে পৌঁছে দিলাম। আর এই রহস্যটা আমরা সবাইকে জানাই।
সবাই আমাদের অভিনন্দন জানাল আর প্রশংসা করল।
নবম শ্রেণি, গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, কুমিল্লা