আজকে মিনুর খুব মন খারাপ। রিয়ুর সাথে খেলা করতে পারছে না সেই জন্যেই। রিয়ুকে সে বেস্ট ফ্রেন্ড মনে করে। যদিও স্কুলে তার অনেক বন্ধু রয়েছে তারপরেও সে রিয়ুকে বেশি মিস করে। আজকে রিয়ু নেই তার সাথে। থাকার কথাও না। কারণ, স্কুল থেকে আসার সময় সে তার ছোট মামার বাড়িতে এসেছে। তার আম্মু তাকে নিয়ে এসেছে। আসার সময় সে অনেক বার তার আম্মুকে বলেছে- ‘আম্মু আমি রিয়ুকে সাথে নিয়ে যাবো, চলো আগে বাড়িতে যাই।’ তার আম্মু নিষেধ করায় সে রিয়ুকে সাথে করে নিতে পারেনি। রিয়ুকে নিতে পারেনি সেই জন্যই তার মন খারাপ। বাড়িতে থাকলে এতক্ষণে রিয়ুর সাথে কত খেলা করা হয়ে যেতো। জামরুল গাছের নিচে বসে মিনু রিয়ুর কথাই চিন্তা করছে আর আজকের ক্লাসে ম্যামের গল্পটি বিড়বিড় করে বলতছে। আজকে ক্লাসে ম্যাম ফুল পরিচিতি পড়িয়েছেন। ম্যাম প্রথমেই পড়িয়েছেন ‘জড়ংব অর্থ গোলাপ’। গোলাপ বলতে গিয়ে ম্যাম পুরো একটি গল্প শুনিয়েছেন। মিনু একা একা সেই গল্পই মনে করতছে এমন সময় তার ছোট মামানি তার কাছে আসলো। কী হলো মিনু! তুমি যে এখানে একা একা বসে আছো? তোমার কি মন খারাপ? তার ছোট মামানি একটা প্রাইমারি স্কুলের টিচার। ছোটদের মন খারাপ হলে তিনি খুব সহজেই ধরতে পারেন। মিনু মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো হুম। তো তোমার মন খারাপ কেন মিনু? কেউ কি বকা দিয়েছে? এবারও মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো না। তাহলে মামানিকে বলো কেন তোমার মন খারাপ। জানো মামানি, আমি না তোমাদের বাড়িতে আসার সময় রিয়ুকে আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, আম্মু আমাকে আনতে দেয়নি। আম্মু বললেন রিয়ুকে এখানে আনলে সে হারিয়ে যাবে। আমার কাছ থেকে নাকি সে দূরে চলে যাবে। আবার সবাই নাকি আমাকে খারাপ বলবে। রিয়ুকে ছাড়া আমার ভালো লাগে না। মামানি বললেন রিয়ুর বাবা-মায়ের কারো নাম্বার আছে কি না তাহলে মামাকে বললে সে অফিস থেকে ফেরার সময় নিয়ে আসতো। মিনুর আম্মু একটু মুচকি হেসে বললেন-রিয়ু হচ্ছে তার বিড়ালের নাম। সে বিড়ালের বাচ্চাকে রিয়ু বলেই ডাকে। মিনুর ছোট মামানি অট্ট হাসিতে মেতে উঠলেন। এরপর মিনুকে কোলে নিয়ে দুই গালে আদর দিয়ে বলেন ওরে আমার রিয়ুর পাগলী মিনু রে! আচ্ছা মামানিসহ দুুদিন পর তোমাদের বাড়িতে যাবো তখন তোমার রিয়ুর সাথে একসাথে খেলা করবো। এখন তার জন্য চিন্তা করতে হবে না তোমার। চলো এখন মামানি তোমার সাথে খেলা করবে। সত্যি, মামানি! তুমি আমার সাথে খেলা করবে? হ্যাঁ মামুনি! আমরা এখন একসাথে খেলবো। এখন একটি গল্প শোন। এক দেশে এক রাজা ছিলেন! তিনি বার বার যুদ্ধে হেরে যেতেন। একবার যুদ্ধে হেরে গিয়ে তিনি জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পালিয়ে আসছিলেন। আসার পথে এক বাগানে অনেক গোলাপ ফুল দেখতে পেলেন। ফুলগুলো এতো বেশি সুন্দর ছিল যে রাজা তাড়াহুড়ো করে ফুল নিতে গিয়ে গোলাপের কাঁটায় বিদ্ধ হলেন। কাঁটার আঘাত পেয়েও তিনি দুটি গোলাপ তুললেন। এরপর রাজপ্রাসাদে গিয়ে এই গোলাপ দুটি নিয়ে তিনি ধ্যানে হারিয়ে গেলেন। সর্বশেষ তিনি খুঁজে বের করলেন, গোলাপ ফুলে কাঁটা থাকার কারণেই গোলাপ এতো সুন্দর। কাঁটা থাকার কারণেই গোলাপের এতো দাম। যুদ্ধে জিততে হলে তার সেনাবাহিনীকেও এমন কাঁটাযুক্ত গোলাপ হতে হবে। তাহলে তিনি যুদ্ধে জয়ী হতে পারবেন। এরপর তিনি তার সৈন্যদের একটি করে গোলাপ ফুল উপহার দিলেন এবং গোলাপের ন্যায় হতে বললেন। পরের পদক্ষেপে তিনি তিনটি সীমান্ত এলাকা জয় করলেন। ম্যামও আমাদের বলছেন আমরা নাকি একেকটা গোলাপ। কাঁটায় বিদ্ধ হয়েও আমরা যেন এই গোলাপের যতœ করি। গোলাপের কাঁটা যেন কখনো গোলাপকে বিদ্ধ না করে।’
গোলাপের কাঁটা
মোহাম্মদ হানিফ