ক্যালেন্ডার বিতরণ

ইমাম সাজিদ

0
44

বাবা অফিস থেকে ফেরার পর রিফাত পড়ার টেবিল থেকে উঠে এসে বাবাকে বলছে অনেকগুলো ক্যালেন্ডার এনে দেয়ার জন্য।
– এতো ক্যালেন্ডার কোথায় পাবো?
– কিনে এনে দেবে, আর কেউ উপহার দিলে নিয়ে আসবে আমার জন্য। আমিও আমার বন্ধুদের কাছ থেকে সংগ্রহ করছি।
– এত ক্যালেন্ডার দিয়ে কী করবে?
– এখন তা বলা যাবে না। সিক্রেট বিষয়, তবে অবশ্যই ভালো কাজ। অনেকগুলো ক্যালেন্ডার আমার চাই এটাই শেষ কথা।

রিফাত সপ্তম শ্রেণি থেকে এবার অষ্টমে উঠল। বাবা মায়ের একমাত্র আদরের সন্তান। আর কোনো ভাইবোন নেই। তার অভিমানটা একটু বেশি।
রিফাত তার বন্ধুদের কাছ থেকে প্রতিদিনই ক্যালেন্ডার সংগ্রহ করছে। এলাকার পরিচিত আংকেলদের কাছ থেকেও সংগ্রহ করছে। আর এদিকে তার বাবা এখন পর্যন্ত একটি ক্যালেন্ডারও তাকে এনে দেয়নি। রিফাত এজন্য বাবার সাথে ভীষণ অভিমান করেছে। বাবার সাথে প্রতিদিন অনেক কথা বলে। কিন্তু কয়েক দিন যাবত একটি কথাও বলছেনা। তার বাবা বিষয়টি খেয়াল করে তার মা কে জানায়। তারপর রিফাতের মা রিফাতকে জিজ্ঞাসা করে।

– তুমি বাবার সাথে কথা বলো না কেন? কী হয়েছে? বকেছে বা কিছু বলেছে?
– কথা বলে কি করবো? আমি কি তার কিছু হই? আমি তো কেউ না। আমি যদি কেউ হতামই তবে অবশ্যই আমার কথাটি রাখতো। কিছু হই না বলেই কথাটি রাখেনি।
– কী বলছো কিছুই বুঝছি না আমি। তোমার বাবা কিসের কথা রাখেনি? আমাকে না বললে বুঝবো কি করে। খুলে বলো আমায়।
– বাবাকে আরো এক সপ্তাহ আগে বলেছিলাম আমাকে অনেকগুলো ক্যালেন্ডার এনে দিতে। কিন্তু এখনো এনে দিলো না। ক্যালেন্ডার না পেলে আমার পুরো প্ল­্যানটাই মাটি হয়ে যাবে।
– তোমাকে না দেখলাম অনেকগুলো ক্যালেন্ডার সংগ্রহ করেছো, তোমার পড়ার টেবিলের ওপর গাদা করে রেখেছো ক্যালেন্ডার দিয়ে। তারপরেও আরো চাচ্ছো। এতো ক্যালেন্ডার দিয়ে কী করবে? আর কিসেরই বা প্ল­্যান?
– সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের খোঁজখবর কেউ নেয় না। ওরা লেখাপড়া করতে পারে না। ওরা নিঃস্ব। আমি চাচ্ছি নতুন বছরে জানুয়ারির ১ম দিনেই ওদের কে ক্যালেন্ডার উপহার দেবো। আর তাছাড়া ওরা অনেকেই ক্যালেন্ডারের দিন-তারিখ গননা করতে জানে না। তাই পাশাপাশি ওদের কে ক্যালেন্ডারের দিন-তারিখ গণনা করার পদ্ধতিও শেখাবো। আমার বিশ্বাস ওরা অনেক খুশি হবে। আর ওরা খুশি হলে আমিও খুশি হবো।
– বাহ্! মহৎ উদ্যোগ। একথা কিভাবে তোমার মাথায় এলো আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। এক্ষুনি আমি তোমার বাবাকে কল দিয়ে বলছি যেন রাতে অফিস থেকে ফেরার সময় তোমার জন্য অবশ্যই অনেকগুলো ক্যালেন্ডার কিনে নিয়ে আসে। আর আমিও তোমাকে বিকেলে অনেকগুলো ক্যালেন্ডার কিনে দেবো।
তারপর রিফাতকে তার মা বুকে জড়িয়ে ধরে।

বিকেলে রিফাতের মা অনেকগুলো ক্যালেন্ডার কিনে দেয় আর রাতে তার বাবাও অনেকগুলো ক্যালেন্ডার নিয়ে আসে। রিফাত খুব খুশি হয়।
তার স্কুলেরও এবার নতুন ক্যালেন্ডার করা হয়েছে। সে বুদ্ধি করে তার স্কুলের প্রধান শিক্ষককে প্ল­্যানটি জানায়। প্রধান শিক্ষক পুরো প্ল­্যানটি শুনে ক্যালেন্ডার দিতে রাজি হন। তিনি নিজে সাথে থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ক্যালেন্ডার বিতরণ করবেন এবং তাতে দিন-তারিখ গণনা শেখাবেন বলেও জানান। একথা শুনে স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক এই কাজে সাথে থাকার আগ্রহ জানায়।

আস্তে আস্তে দিন ঘনিয়ে আসে। আনন্দে ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষায় ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ রাতে আর ঘুম হয় না রিফাতের। অবশেষে কাক্সিক্ষত দিনে জানুয়ারির ১ তারিখ সকাল বেলা রিফাতের বাবা মা, স্কুলের প্রধান শিক্ষক, অন্যান্য শিক্ষক ও তার বন্ধুরা মিলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে নতুন বছরের নতুন ক্যালেন্ডার বিতরণ করে এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরকে দিন-তারিখ গণনা করা শেখায়।
রাস্তা ঘাটের মানুষরা জড়ো হয়ে রিফাতদের কার্যক্রম দেখছিলো আর সুনাম করছিলো। খবর পেয়ে কয়েকটা চ্যানেলের রিপোর্টাররাও এসেছিলো। রিপোর্টাররা রিফাতের সাক্ষাতকার নিয়েছে ও ছবি তুলেছে। রিফাতের যেন খুশির শেষ নেই। এদিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক কাউকে না জানিয়েই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য খাবারের আয়োজন করে সাথে করে খাবার এনেছে।
শিক্ষার্থী, গাজীপুর