যেকোনো অর্জন যেকারো জন্য সত্যি আনন্দের আর অনুপ্রেরণার। হোক সেটি ছোট কিংবা বড় কোনো অর্জন, দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক। এমন অর্জনের গল্প জেনে আমরাও অনুপ্রাণিত হই। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন দেশের খোলোয়াড়দের তেমনি কিছু অর্জনের গল্প জানার চেষ্টা করবো। আশা করি ভালো লাগবে।
ক্রিকেটে অস্কার জিতলেন সাকিব
বিশ্বক্রিকেটের আদর্শ আর বাংলাদেশের প্রাণ সাকিব আল হাসান। যিনি একসময়ের দীর্ঘদিনের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। যদিও তিনি বর্তমানে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আছেন তারপরও এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও তার বিগত সময়ের কীর্তিগুলো ঠিকই তাকে খুঁজে ফিরছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) ‘সেরা বোলিং স্পেলের’ জন্য অস্কার জয়।
২০১৩ সালে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের প্রথম আসরে ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেছিলেন সাকিব। বল হাতে দ্বিতীয় ম্যাচেই রেকর্ড গড়েন তিনি। বার্বাডোস ট্রাইডেন্টের বিপক্ষে ৪ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে নেন রেকর্ড ৬ উইকেট। সিপিএলের ইতিহাসে এখনো সেটি সেরা বোলিং স্পেল।
সেদিন জ্যাসন হোল্ডার ও শ্যানন গ্যাব্রিয়েল বার্বাডোজের জাস্টিন গুলেন, ডাভি জ্যাকবস ও ড্যারেন ব্রাভোকে ফেরান ২৫ রানের মধ্যে। এরপর টানা ছয়টি উইকেট তুলে নেন সাকিব। একে একে তিনি ফেরান রস টেলর (১১), ডোয়াইন ব্রাভো (৫), কেভিন ও’ব্রায়েন (৯), নিকোলাস পুরান (০), কেভিন কুপার (০) ও স্যামুয়েল বার্দিকে (১)। কী ভয়ংকর স্পেলই না করেছিলেন সেদিন। তার বোলিং তোপে বার্বাডোজ মাত্র ৫২ রানে অলআউট হয়েছিল। ওই খেলায় ম্যাচসেরা হয়েছিলেন সাকিব।
সাকিবের সেই জাদুকরী স্পেলের জন্য গত ২০ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার তাকে ‘সিপিএল অস্কার’ পুরস্কারে ভ‚ষিত করা হয়েছে। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ভেরিফায়েড পেইজে পুরস্কার ঘোষণার পর সাকিবের সেই বোলিং স্পেলের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা পারফরমারদের পুরস্কৃৃত করছে। তারা সেটির নাম দিয়েছে ‘সিপিএল অস্কার’।
শচিনের লরিয়াস পুরস্কার অর্জন
ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে শচিন টেন্ডুলকার অসংখ্যবার পুরস্কার জিতেছেন। তবে তার কাছে সবচেয়ে সেরা পুরস্কার ছিল ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা অর্জন। সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারের শেষপর্যায়ে এসে ওয়ানডেতে শিরোপার স্বাদ নিয়ে বিদায় নেন ভারতের এই ঈশ্বরখ্যাত ব্যাটসম্যান।
বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে শচিনকে তখন কাঁধে উঠিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন বিরাট কোহলি, সুরেশ রায়নার মতো তরুণ ক্রিকেটাররা। আর এ ‘ল্যাপ অব অনারের’ জন্য লরিয়াস পুরস্কার জিতেছেন শচিন টেন্ডুলকার।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার জার্মানির বার্লিনে লরিয়াস ট্রফি অনুষ্ঠানে বিগত দুই দশকের ‘সেরা স্পোর্টিং মোমেন্ট’ পুরস্কারটি তুলে দেয়া হয় ভারতের কিংবদন্তি সাবেক এ তারকা ব্যাটসম্যানকে। বিভিন্ন ক্যাটাগরির মধ্যে কেবল এই পুরস্কারটি সাধারণ দর্শকের ভোটে নির্বাচিত করা হয়।
বাবরের সম্রাট হবার গল্প
ধ্রুপদী ব্যাটসম্যানের আরেক রূপ পাকিস্তানের বাবর আজম। যিনি আধুনিক ক্রিকেটেও ব্যাকরণ মেনে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে যাচ্ছেন। সম্রাট বাবরের মতো তার ব্যাট ঢাল-তলোয়ার হয়ে কচুকাটা করছে বোলারদের। বাবরের ব্যাটিংয়ের এ ধারাবাহিকতা দারূণ প্রভাব ফেলেছে ব্যাটসম্যানদের র্যাংকিংয়ে।
টি-টোয়েন্টির শীর্ষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আছেন অনেকদিন ধরে। ওয়ানডেতেও আছেন তালিকার তিন নম্বরে। শুধু টেস্টে ছিলেন পিছিয়ে। এবার সে খরাও কাটালেন বাবর আজম। শীর্ষ তিনে জায়গা না করে নিতে পারলেও পাঁচে চলে এসেছেন পাকিস্তানের এ তারকা ব্যাটসম্যান।
আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ৫টি টেস্ট খেলার সুযোগ মিলেছে বাবরের। আর তাতে দুই অর্ধশতকের পাশাপাশি হাঁকিয়েছেন ৪টি শতক। সর্বোচ্চ বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৪৩ রান। একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০০ এর অধিক গড় নিয়ে করেছেন ৬১৫ রান। আর তাতে ৮০০ র্যাংকিং পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ নম্বরে উঠে এসেছেন এ তারকা।
বর্তমান ক্রিকেটে বিরাট কোহলি একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন ফরম্যাটে ৫০-এর অধিক গড়ে রান করেছেন। বাবরের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ৫০-এর অধিক গড়ে রান থাকলেও টেস্টে ছিলেন ব্যাপক পিছিয়ে। তবে ধারাবাহিক ব্যাটিংয়ের ফলে টেস্টেও এখন গড় উঠে এসেছে ৪৫-এ। দুর্দান্ত এ ফর্ম বজায় রাখলে হয়তো অচিরেই কোহলিকে স্পর্শ করতে পারবেন বাবর আজম।
তবে একদিক দিয়ে বাবর আজম সবার ওপরে। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন ফরম্যাটে ৮০০ রেটিং পয়েন্ট অর্জন করেছেন। সেখানে কোহলি টেস্ট ও ওয়ানডেতে ৮০০ এর অধিক রেটিং পয়েন্ট পেলেও টি-টোয়েন্টিতে তা ৬৭৩ পয়েন্ট।
নতুন ইতিহাসের পাতায় মেসি
নতুন করে ইতিহাস রচনা করলেন লিওনেল মেসি। প্রথম ফুটবলার হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ লরিয়াস পুরস্কার নিজের করে নিলেন আর্জেন্টাইন এই ফুটবল জাদুকর।
বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার দেওয়ার প্রচলন প্রায় ২০ বছর আগে থেকে। তবে একবারও এ পুরস্কার জেতেনি কোনো ফুটবলার। শেষ ছয় বছর ধরে সে ধারা ভাঙার চেষ্টা করছিলেন মেসি। পাঁচবারের চেষ্টায়ও মেলেনি মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারটি। তবে এবার আর হাতছাড়া করতে পারেনি মেসিকে। ঠিকই জিতে নিলেন লরিয়াস ট্রফি। তবে ভাগ বসিয়েছেন ফর্মুলা ওয়ান তারকা লুইস হ্যামিলটন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাতে জার্মানির বার্লিনে এক জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এবারই প্রথম যৌথভাবে নির্বাচিত হলো বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ। মেসি ও হ্যামিলটন দুজনই সমানসংখ্যক ভোট পেয়ে ‘বেস্ট স্পোর্টসম্যান অব দ্য ইয়ার’ হন। এ বছর তারা পিছনে ফেলেন টেনিস তারকা রাফায়েল নাদাল, ম্যারাথনার এলিদু কিপচোগে ও কিংবদন্তি গলফার টাইগার উডসকে।
গত বছর লরিয়াস পুরস্কার জিতেন টেনিস তারকা নোভাক জোকোভিচ। তার উত্তরসূরি ৩২ বছরের মেসিকে এবার নিজের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে পারেননি জোকোভিচ। কারণ ছুটিতে থাকায় অনুষ্ঠানে হাজির হননি লিওনেল মেসি।
খেলোয়াড়ি জীবনে সম্ভব সব পুরস্কার জিতেছেন ৩২ বছরের আর্জেন্টাইন তারকা মেসি। গত বছর পিচিচি ট্রফি জয়ের পাশাপাশি জিতেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শ্যু। বছরের শেষে এসে রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো জিতে নেন ব্যালন ডি’অর পুরস্কারও। তবুও একটি আক্ষেপ থাকবে এ ফুটবলারের। কারণ জেতা হয়নি আর্জেন্টিনার হয়ে মেজর কোনো শিরোপা। ক্যারিয়ারে প্রায় সব পাওয়া এ ফুটবলার বিশ্বকাপ জিতলে পূর্ণতার সুখ নিয়ে থামতে পারবেন ফুটবল থেকে।