জাদুর কলম ও বাক্স

মিনহাজ উদ্দীন শরীফ

0
63

বাবা-মায়ের আদুরে সন্তান জসিম ও হাফিজ। জসিম হাফিজের চেয়ে দু’বছরের বড়। জসিম চতুর্থ শ্রেণির ফার্স্টবয় এবং হাফিজ দ্বিতীয় শ্রেণির ফার্স্টবয়। জসিম আর হাফিজকে নিয়ে বাবা-মা অনেক স্বপ্ন দেখে। তারা দু’জন প্রতিদিন মিলেমিশে স্কুলে যাওয়া-আসা করে। দু’জনের চলাফেরা সবার নজর কাড়ে।
গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ তাদের আদবকায়দা ও কথা বলার ভাবভঙ্গি দেখে বাহবা দেয়! একদিন হাফিজ বাগানের রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় একটা টিনের বাক্স দেখতে পায়। সে সেই বাক্সটা ধরবে কি-না এই ভেবে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। তাই জসিমকে ডেকে দেখায় বাক্সটি। জসিম বলল, হাফিজ, যার বাক্স সে নিয়ে যাইবনে, চল আমরা বাড়ি যাই। হাফিজ বলে, দাদা এখানে বাক্সটি ফেলে চলে যাবো?

জসিম আবারো বলে, অন্যের বাক্স আমরা কেন নিয়ে যাবো? পরে যদি সে খুঁজে না পায় তাহলে আমাদের চোর ভাবতে পারে। হাফিজ বলে, দাদা ঠিকই বলেছো। তবে আমরা যদি বাক্সটা ফেলে যাই তখন অন্য কেউ বাক্সটি নিয়ে যেতে পারে। তাহলে এই বাক্সের মালিক তার বাক্সটি তো আর খুঁজেই পাবে না।
জসিম বলে, ছোট তোর কথাতেও যুক্তি আছে। ঠিক আছে চলো এটা বাসায় নিয়ে যাই। বাসায় নিয়ে বাবা-মাকে ডেকে এই বাক্সটি বাগানে কুড়িয়ে পাওয়ার কথা বলে। তাদের বাবা বলে, গ্রামে এত লোকজনের মধ্যে বাক্সটির আসল মালিককে কী করে খুঁজে পাবো?
জসিম আর হাফিজ এই নিয়ে ভেবে কিছুক্ষণ পর একটা উপায় খুঁজে পায়। সেটা হলো মাইক দিয়ে সারা গ্রামে বাক্স পাবার কথা প্রচার করা হবে। যে ব্যক্তি উপযুক্ত প্রমাণ দেখাতে পারবে সে হবে বাক্সের মালিক। তারপর আমরা তার বাক্স তাকে ফিরিয়ে দেবো।এমন আইডিয়া শুনে বাবা-মা খুশি হন।

কথামতো কাজ শুরু হয়। প্রচার করার কিছুক্ষণ পরই মানুষের ভিড় লেগে যায় তাদের বাড়িতে। কিন্তু কেউ সঠিক প্রমাণ দিতে পারেনি। এজন্যই জসিম আর হাফিজের বড্ড মন খারাপ হয়ে যায়। কারণ এই বাক্সের আসল মালিক বাক্স হারিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে এই ভেবে।
জসিম আর হাফিজ বাক্সটি এক সপ্তাহ নিজেদের কাছে রাখে। এক সপ্তাহের মধ্যে উপযুক্ত প্রমাণ দেখাতে যারা এসেছিল তারা সবাই ব্যর্থ হয়েছে। হঠাৎ একদিন শফিকুল স্যার তার হারিয়ে যাওয়া বাক্সের কথা ক্লাসে বলেন। তখন জসিম স্যারকে আড়ালে ডেকে বলে, স্যার আমার ছোট ভাই একটা বাক্স খুঁজে পেয়েছিল এক সপ্তাহ হয়ে গেছে।
স্যার বলেন, জসিম আমারও বাক্সটি হারিয়ে গেছে এক সপ্তাহ আগে। জসিম বলে, স্যার বিকেলে আমাদের বাসায় গিয়ে তাহলে দেখে আসবেন বাক্সটি আপনার কি না। জসিমের কথা মতো শফিকুল স্যার তাদের বাসাতে গেল। গিয়ে হালকা নাশতা খাওয়ার পর স্যার বলেন, এক এক করে তার বাক্সে কী কী ছিল। জসিম আর হাফিজ বাক্সটিতে যা-যা পেয়েছিল তা স্যারের বিবরণের সাথে হুবহু মিল পেল।
Ñ বাক্সে যদিও মূল্যবান তেমন কোনো জিনিস ছিল না। কয়েকটা কাগজ পত্র একটা কাঠের ঘোড়া এবং দুটো কলম ছিল। স্যার এতটুকু ছেলেদের সততা দেখে মুগ্ধ হয়ে দু’জনকে দুটো কলম উপহার দিলেন।
Ñ জসিম আর হাফিজ বড্ড খুশি হয়েছে স্যারের থেকে কলম পেয়ে। স্যার বাবা-মাকে বলেন, আপনাদের দুটো সোনার টুকরো ছেলে। এমন সোনার টুকরো ছেলে যেন বাংলার ঘরে ঘরে হয়। এই বলে শফিকুল স্যার বাক্স নিয়ে চলে গেলেন। জসিম আর হাফিজের বাবা-মা স্যারের মুখে একথা শুনে খুশি হন। তারপর দু’ছেলেকে বাবা কাছে টেনে বলেন, প্রত্যেক বাবা-মা সন্তানদের থেকে এমন কিছুই আশা করে।
একাদশ শ্রেণি, শচীন্দ্র কলেজ, আজমিরিগঞ্জ, হবিগঞ্জ