স্বপ্নের সাইকেল

মুহাম্মাদ শাকিল

0
173

গ্রামের নাম শহীদনগর। গ্রামের এক পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদীর শাখা। নদীর পাশেই আব্দুস সালামের পরিবার। পরিবারে কেবল তার স্ত্রী আর একমাত্র ছেলে জামিল ছাড়া আর কেউ নেই। জামিলের ইচ্ছে  সে সবসময় সাইকেল চালাবে। রোজ সাইকেল দিয়ে স্কুলে যাবে, গাভীর দুধ বাজারে নিয়ে যাবে, বিকেলবেলা বন্ধুদের সাথে খেলতে খেলার মাঠে যাবে। কিন্তু বাবার এক কথা, ছেলেকে কোনো দিন সাইকেল কিনে দেবে না। কারণ তিনি চান না যে জামিল সাইকেল দিয়ে চলাফেরা করুক। জামিল বাবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে রোজই টিফিন পিরিয়ডে বাবার দেওয়া টিফিনের টাকায় সাইকেল ভাড়া করে সাইকেল চালানো শিখেছে। তারও এক কথা সাইকেল সে কিনবেই। রোজই মায়ের কাছে বায়না করে বলে, ‘মা আমাকে সাইকেল কিনে দেবে না’? তখন মা বলে, তোমার বাবা যেটা পছন্দ করেন না, তুমি সেটা করতে যেও না। জামিল বলে, বাবাতো কোনো দিন সাইকেল হাতেই নেননি, সাইকেল চালাতেও পারেন না, তাই সাইকেলের কদর বুঝেন না। মা তুমি বাবাকে বলে একটা সাইকেলের ব্যবস্থা করে দাও। মা ছেলেকে আশ্বাস দিয়ে বলে, “আচ্ছা ঠিক আছে আমি ব্যাপারটা দেখছি। জামিল হাস্যোজ্জ্বল মুখে খেলায় চলে গেল। পরের দিন জামিল ক্লাস করছিল। টিফিনের সময় ঘনিয়ে এলো। আজ তার বাবা তাকে টিফিন খরচের টাকা দেয় নি। এখন সে সাইকেল ভাড়া করবে কিভাবে। সাইকেল না চালিয়ে টিফিনের সময়টা তার বিরক্তিকর লাগে। তাই জামিল লুকিয়ে তার এক বন্ধুর সাইকেল নিয়ে চালায়। যাতে তার বন্ধু দেখতে না পারে। টিফিন পিরিয়ড শেষ হওয়ার সাথে সাথে জামিল স্কুলে ফেরে। জামিল যার সাইকেল নিয়ে চালাচ্ছিল সে অন্যদের নিয়ে স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে। জামিল দেখে হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, কিরে তোরা ক্লাসে যাসনি? ‘বন্ধুরা বলল,’ আজ এখানেই ক্লাস করবো। ‘জামিল ভয়ে বলে, ‘এখানে ক্লাস করবি মানে?’ বন্ধুরা বলে,‘মানে- টানে পরে বুঝাচ্ছি, আগে বল সাইকেল নিলি কেন?’ জামিল এখনো ভয় পাচ্ছে। বলে, ইয়ে মানে আজ বাবা টাকা দেয়নি তো তাই আরকি..সাথে সাথেই চলে জামিলের ওপর আক্রমণ। জামিলকে ওরা আঘাত করে। আর বলেও দেয়, ‘কোনো দিন যদি দেখেছি আমাদের সাইকেল হাতে নিতে তবে তুই বুঝবি আমরা কতটা খারাপ হতে পারি। ‘জামিলের আর ক্লাস করা হলো না। সে সেখান থেকেই মন খারাপ করে বাড়ি ফিরল। জামিল বাড়িতে পৌঁছুতেই তার মায়ের সামনে পড়ল। মা তার শরীরে ক্ষত দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কিরে জামিল, তোর এই অবস্থা কেন? ’ জামিল তার মাকে বলল স্কুলের ঘটে যাওয়া ঘটনাটি। জামিল ঘরে ঢুকে স্কুল ড্রেস পাল্টে বিশ্রাম নেয়। জামিলের বাবা তখন বাড়ি ফেরে। জামিলের মাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে। আব্দুস সালাম বলে,” কি ব্যাপার! কী চিন্তা করছো? “জামিলের মা বলে,” জামিলকে একটা সাইকেল কিনে দিলে সমস্যা কোথায়? ‘আব্দুস সালাম বলে, শোনো মায়ের আবদার’। ছেলের সাথে মাও পাগল হয়ে গেছে। ‘জামিল ঘরে থেকে সব কথা শুনছিল। মনে মনে বলে, ‘একটা সাইকেল কিনে দিলেই তো হয়। বাবা এমন কেন? এমন সময় মা ঘরে ঢুকল। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। জামিলের মা হঠাৎ করে বলল, ‘আমি তোকে সাইকেল কিনে দেবো।‘ জামিল আশ্চর্য স্বরে বলল, ‘সত্যি? ‘ মা বলল,’ হ্যাঁ সত্যি। জামিলের এক মামা আছে। উনার সাথে জামিলের মা কথা বলল। মামা বলে, সমস্যা নেই কয়েক দিনের মধ্যেই জামিলের জন্য একটা সাইকেল নিয়ে আসবো।’

জামিল সাইকেল পাবে শুনে এখন প্রচÐ খুশি। স্কুলের সবাইকে বলে দিয়েছে যে তার জন্য তার মামা সাইকেল নিয়ে আসবে। তার সেই বন্ধুরা, যারা তাকে আঘাত করেছিল তারা তখন বলেছিল, ‘দেখবো তোর কেমন করে সাইকেল আসে আর তুই কিভাবে চালাস। ‘জামিল বলল,’ ঠিক আছে দেখিস। ‘জামিল রাত্রিবেলা স্বপ্ন দেখে, তার মামা তার জন্য সাইকেল নিয়ে এসেছে। সে সাইকেল নিয়ে চালানো শুরু করেছে। প্রজাপতিকে বলছে, বলেছিলাম না আমি আমার সাইকেল চালাবো। নদীকে বলছে, দেখো এটা আমার সাইকেল। একসময় জামিল সাইকেল রেখে একটা ডাবগাছে ডাব পাড়তে উঠেছে। ডাবগাছ থেকে নামার সময় কিছু লোক তাকে তাড়া করে। জামিল দৌড়াতে থাকে। তখনই তার ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম থেকে উঠে দেখে তার মামা তার জন্য সাইকেল নিয়ে এসেছে। জামিলের বাবা জামিলের মামার সাথে তর্ক করছে। মামা বলছে, ‘ছোট ছেলে আবদার করেছে একটা সাইকেলের জন্য। আপনার তো উচিত ছিল কিনে দেওয়ার’ জামিলের বাবা বলল, ‘ঠিক আছে তোমরা মামা-ভাগিনা যা ইচ্ছা তাই করো। জামিল রাতে স্বপ্নে সাইকেল চালিয়েছে আজ বাস্তবেই সাইকেল চালাবে। বিলম্ব না করে জামিল সাইকেল নিয়ে মাঠে চলে গেল। নদীর পাশ দিয়ে সে সাইকেল চালাচ্ছে, প্রজাতির পিছুও নিয়েছে। মনে মনে বলছে, বাবাকে আর কষ্ট করে দুধ নিয়ে বাজারে যেতে হবে না, আজ থেকে আমি দুধ নিয়ে বাজারে যাবো। জামিল চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘দেখো তোমরা! এটা আমার সাইকেল। আজ থেকে কারো সাইকেল চাইবো না।” ওদিকে স্কুলের সেই বন্ধুদের দেখা গেলো। তারা অবাক হয়ে দেখছে। খানিকক্ষণ পরেই একটি কচি প্রাণের চিৎকার শুনতে পাওয়া গেল। জামিল আর ইহজগতে বেঁচে নেই। জামিলকে ওরা আর বাঁচতে দেয়নি। জামিলের মা ছেলের শোকে পাগল হয়ে গেছে, বাবার মুখ থেকে কোনো কথাই বের হয় না। আর মামা কেবল বিলাপ পারছে ভাগ্নের অকালমৃত্যুতে। পুলিশ এসেছে, স্কুলের সেই কাপুরুষ বন্ধুদেরকে ধরে ফেলেছে। আজ হয়তো জামিলের স্বপ্নটা পূরণ হয়েছিল, কিন্তু তার প্রসারতা লাভ করেনি’।

অনার্স ১ম বর্ষ, শ্রীপুর সরকারি কলেজ, গাজীপুর।