সোলমেট ও শায়লা

সালেহ মাহমুদ

0
100

অবিশ্বাস্য ব্যাপার। আমি ভাবতেই পারছিনা আমার ছোট মেয়ের কান্ড কারখানা। মাত্র এগারো বছরের মেয়েটা এমন যুদ্ধংদেহী হতে পারে ভাবতেই আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও আমাকে বিশ্বাস করতে হচ্ছে। কারণ বাস্তবেই ঘটে চলেছে ব্যাপারটা।
আমি বিছানায় শুয়ে একটা উপন্যাস পড়ছিলাম। পাশের রুমে মেয়েটা কি সব আঁকাআঁকি করছিল। পড়ন্ত বিকেল। ওর আম্মু বাইরে কোথাও গ্যাছে। বড় মেয়েটা এখনো ফেরেনি কলেজ থেকে। ছেলেটা তার রুমে ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত। এর মাঝেই মেয়েটার ভয়ঙ্কর চিৎকারে আমি দৌড়ে যাই ওর রুমে।
গিয়ে দেখি ও কাউকে আক্রমণ করার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। দু’হাতের ভংগি খামচে কিছু ধরে ফেলার মতো। চিৎকার করে বলছে, আমি তোকে শেষ বারের মতো বলছি চলে যা এখান থেকে। নয়তো আমি তোকে গলা টিপে মেরে ফেলবো। ও যেদিকে ফিরে কথাগুলো বলছে সে দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যাই। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় নিজের চোখকে। একটা কিম্ভূত দর্শন মনুষ্যরূপী জন্তু মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হাসছে খ্যাক খ্যাক করে আর ওকে ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তু মেয়ের যুদ্ধংদেহী ভঙ্গী কিংবা অন্য কিছুর জন্য এগোতে সাহস পাচ্ছে না।
মেয়েটা আমার উপস্থিতি টের পেয়ে প্রায় আদেশের সুরে বললো, আব্বু ওকে মেরে ফেলো, মেরে ফেলো।
আমি মুহূর্ত মাত্র অপেক্ষা করে ঝাঁপিয়ে পড়লাম জন্তুটার ওপর। আমার হাতে কেউ যেন একটা পাকানো মোটা শক্ত বাঁশের লাঠি ধরিয়ে দিলো। আমি সেই লাঠি দিয়ে বেদম পেটাতে লাগলাম জন্তুটাকে। কি আশ্চর্য, কিছুক্ষন মার খাওয়ার পর একদম হাওয়া হয়ে গেলো জন্তুটা। আমি মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, মেরে ফেলেছি ওটাকে আমি। তোমার কোন ভয় নেই মা।
না আব্বু ওটা মরে নি, পালিয়েছে। আবার আসবে আমাকে আক্রমণ করতে।
আমি ওকে অভয় দেই, না মা আর আসবে না। যে মার খেয়েছে! বলে হাতের লাঠিটার দিকে তাকাই। বলি, এই লাঠিটা আসলো কোত্থেকে তোমার রুমে। আমি তো এমন কিছু ঘরে রাখি নি!
মেয়েটা লাঠিটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, ওটা আমার সোলমেট দিয়েছে তোমাকে। এখুনি আবার নিয়ে যাবে।
ওর কথা শুনে আমি বোকা বনে যাই। আবার তাকাই লাঠিটার দিকে। আর কি আশ্চর্য, আমার হাত থেকে ওটা কেউ যেন টেনে নিয়ে গেলো হঠাৎ। তারপরই অদৃশ্য হয়ে গেলো বাতাসে। যেন কোন যাদুমন্ত্র মঞ্চস্থ হলো।

দুই
আমার ছোট মেয়েটার নাম শায়লা। সে অসম্ভব মেধাবী। দু’বছর বয়স থেকেই সে অদ্ভূত সব কা- করতে থাকে। সেই বয়সেই একবার বাসার দরজা খোলা পেয়ে হুট করে বেরিয়ে যায়। সেদিন আমাদের বাড়ীঘর ওলট-পালট করে পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছিল। এরই ফাঁকে কখন যে সে বেরিয়ে যায়, টের পায় না কেউ। আমি এক বন্ধুর সাথে একটু বাইরে ছিলাম। ঘন্টাখানেক পর বাসায় ফিরেই খোঁজ করলাম ওকে। কিন্তু পেলাম না কোথাও। আমার বাসা তখন দোতলায়। মাঝে মাঝেই সে একা একা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যেত। চোখে চোখে রাখতে হতো তাকে। হাঁটতে শেখার পর থেকেই ও সব সময় চেষ্টা করতো একা একা সব কিছু করতে। খাইয়ে দেয়া পছন্দ করতো না, নিজ হাতে খেতে চাইতো। কোথাও গেলে কোল থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করতো। রিমোট কেড়ে নিয়ে তার প্রিয় চ্যানেল চালিয়ে কার্টুন দেখতো। কেউ চ্যানেল ঘোরালেই চেঁচাত তারস্বরে।
আমরা ওকে খুঁজতে খুঁজতে অস্থির হয়ে যাই। পাই না কোথাও। অলি-গলি শেষ করে মেইন রোডে খোঁজা শুরু করলাম সবাই। যোহর নামাযের পর মাইকে ঘোষণা দেওয়া হলো। এরপরই মেইন রোড সংলগ্ন মসজিদের মুয়াজ্জিন আমাদের একটা মোবাইল নাম্বার দিয়ে বললো, একটা লোক ছোট একটা বাচ্চা পেয়ে এই মোবাইল নাম্বার দিয়ে গেছে আমাকে। লোকটি নাকি দোকানে দোকানে ঘুরে বাচ্চাটার বাসার সন্ধান করেছে, কিন্তু পায় নি। তাই নিয়ে গ্যাছে তার বাসায়।
আমরা সেই মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করলে সে আমাদের সাথে দেখা করতে চাইলো। আমরা ভাবলাম ছেলেধরা কিনা! সেজন্য দোলাইরপাড় বাসস্ট্যান্ডে লোকটি আসার সাথে সাথেই ঘিরে ধরলাম তাকে।
তখন পড়ন্ত বিকেল। হারিয়েছে দশটা-এগারোটার দিকে। লোকটি আমাদেরকে নিয়ে গেলো মুরাদপুরের এক গলির ভেতর।
গিয়ে দেখি আমার শায়লা আরাম করে ঘুমুচ্ছে ভাঙ্গা বেড়ার ঘরের ফ্লোরে বিছানো পরিচ্ছন্ন বিছানায়। লোকটির দিকে তাকালাম সপ্রশ্ন।
লোকটি এবার একগাল হেসে দিয়ে বললো, এই যে হাউজ দেখতাছেন, এইহানথেক মগ দিয়া পানি লইয়া ইচ্ছামত লাফালাফি করছে আমার মাইয়্যার লগে। গোসল শেষ হইলে আমার বউ ওর গায়ে শইষ্যার তেল মাইখ্যা ভাত খাওয়াইয়া ঘুম পাড়াইয়া দিছে। ওর আরামের ঘুম ভাঙতে চাই নাই দেইখা আপনেগো ডাইক্যা আনছি।
কৃতজ্ঞতায় আমার মনটা ভরে গেলো। জড়িয়ে ধরি লোকটিকে।
শায়লার মাথায় আঙ্গুল বুলিয়ে ডাক দিতেই ঘুম ভেঙ্গে যায় ওর। আমার দিকে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাত বাড়িয়ে দেয় কোলে ওঠার জন্য।
লোকটির কাছেই শুনলাম ওকে পাওয়ার ঘটনা।
লোকটি পেশায় সিএনজি ড্রাইভার। তার গাড়ির একটা পার্টস খুঁজতে খুঁজতে সে দোলাইরপাড় মোড় থেকে দয়াগঞ্জ নতুন রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকে। নবীনগর মোড়, খালপাড় বাজার পার হয়ে সামনে এগোতেই দেখে ছোট্ট মেয়েটা রাস্তা দিয়ে দৌড়াচ্ছে একা একা। দৌড়াতে দৌড়াতে কখনো কখনো রাস্তার মাঝে চলে গেলে কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে ফুটপাতের দিকে ঠেলে দেয়। লোকটির চোখে পড়ার পর থেকে সে খেয়াল করে শিশুটির সাথে কেউ নেই। তার সন্দেহ হয় শিশুটি রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে। তারপরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য সে তার পিছু পিছু হাঁটতে থাকে। লিটুর বাড়ির মোড় পার হলে এক মহিলা ওকে কোলে নিতে গেলে ধমকে ওঠে সে- এই এই আমার মাইয়ারে তুমি ধর কেন? আমি লগে আছি।
মহিলা চলে যায়। তখন লোকটি তাকে কোলে নিয়ে ফিরতি পথে দোকানে দোকানে জিজ্ঞেস করে কেউ চেনে কিনা। হতাশ হয়ে তাকে কোলে নিয়ে মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে অনেকক্ষণ। তারপর মুয়াজ্জিনের কাছে নিজের মোবাইল নাম্বার দিয়ে যায়। সেই সূত্র ধরেই ওকে ফেরত পাই আমরা।
ওকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে আমরা সবাই আত্মহারা। কিন্তু ওর কোন ভাবান্তর নেই। সবাই ওকে দেখতে আসছে দেখে যেন মজা পায় খুব। আনন্দে লাফ-ঝাঁপ করে।
আমাদের দু’জনের মাঝখানে ঘুমাতে সে। একদিন মাঝরাতে ঘুম ভাঙতে দেখি ও নেই। ওর মাকে ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করি, এই শালু কোথায়? ওকে যে আমরা শালু ডাকা শুরু করেছি কবে থেকে মনে নেই।
আমরা দু’জনে এ ঘর ও ঘর খুঁজে না পেয়ে ড্রইং রুমে এসে দেখি ও বসে বসে টিভি দেখছে। ডোরেমন দেখছে আর হাসছে আপন মনে। আমি বিরক্ত হয়ে বলে উঠি, কি পেয়েছে চ্যানেলের ব্যাটারা, চব্বিশ ঘন্টা এক ডোরেমন চালিয়ে রাখবে।
শালু ততদিনে কথা বলতে শুরু করেছে পুটুর পুটুর করে। সবচেয়ে অবাক কা- হলো, অন্য শিশুদের মতো আধো আধো বাক্য বলে না, যাই বলে পূর্ণ বাক্যে বলে। যেমন, ডিম পোচ দিয়ে নাস্তা দিলেই আনন্দ প্রকাশ করে- কি মজা, আমার কুসুম ভাঙে নি। আব্বু আমি কিন্তু কুসুম আস্ত খাব, ভাঙবে না কিন্তু।
ডিমের সাদা অংশ রুটি দিয়ে খাওয়া শেষ হলে ঘাড় কাৎ করে বড়ো হা করবে আর আমি আস্ত কুসুম ওর মুখে তুলে দিলে গাল ফুলিয়ে সাবধানে খেয়ে ফেলবে, যাতে একটুও পড়ে না যায়।
এর ক’দিন পরই একদিন সকাল থেকে সে হিন্দিতে কথা বলা শুরু করে সবার সাথে। হুবহু ডোরেমনের হিন্দি ভাষা। বাংলা বলেই না। আমরা সবাই মিলে ওকে বাংলা বলানোর চেষ্টা করি। কিন্তু কিছুতেই ও বাংলা বলে না। আমরা বাংলায় বললে ও জবাব দেয় হিন্দিতে। আমাদের কাছে কিছু চাইলেও হিন্দিতে চায়। অদ্ভূত ব্যাপার!
আমি ওকে নিয়ে যাই আমার খুব প্রিয় এক শিক্ষকের কাছে। উনি ওর সাথে মজা করে হিন্দিতে কথা বললেন। প্রশংসা করলেন খুব। বললেন, তোমার মেয়ে অনেক জ্ঞানী হবে। বিদেশী ভাষা রপ্ত করা চাট্টিখানি কথা না। ও যখন আয়ত্ব করেছে, করতে দাও। একাধিক ভাষা জানলে ও অনেক এগিয়ে যাবে। দোয়া করি ওকে।

তিন
শালুর আট বছর পূর্ণ হলো যেদিন সেদিন আজব ঘটনা ঘটলো। আমাদের খাটের নিচ থেকে সুন্দর একটা গিফট্্ প্যাক বের করলো শালু। খুলে তো আমরা সবাই অবাক। সুন্দর দামী একটা বিদেশী খেলনা। জিজ্ঞেস করি কোত্থেকে পেলে এটা? ও বললো, জানি না, খাটের নিচে পেলাম। কিন্তু ব্যাপারটা রহস্যময় হয়ে রইলো। খুব হৈ চৈ হলো ক’দিন। বড় মেয়ে বললো, আম্মুর মোবাইলে একটা ম্যাসেজ এসেছে- রোমান হরফে লেখা- তোমার গিফট্্টা পছন্দ হয়েছে খুকি? আমি তোমার জন্য জাপান থেকে নিয়ে এসেছি এটা। ভালো থেকে- তোমার সোলমেট। মজার ব্যাপার হলো, শায়লা মাঝে মাঝেই ওর মা’র মোবাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করতো। ম্যাসেজ লিখতো, ম্যাসেজ পড়তো মনোযোগ দিয়ে।
এই ঘটনায় আমি বেশ অবাক হই। সেদিনই প্রথম সোলমেট শব্দটা শুনি। পরিবেশ হালকা করার জন্য বলি, এটা কারো চালাকি। সারপ্রাইজ দিয়েছে আমাদের।
বিষয়টা চাপা পড়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ একদিন ভর সন্ধ্যায় শালু ওর নানুবাড়ির ছাদ থেকে ভয় পেয়ে দৌড়ে নেমে এলো। ওর মা ওকে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে মা?
ও হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, একটা মহিলা আমাকে ভয় দেখাতে এসেছিলো ছাদে।
এ্যা, বলে কি! কেমন দেখতে মহিলা?
ময়লা কালো কাপড় পরা, বড় বড় নোখ, চোখগুলো ইয়াব্বড় আর ঘোলা ঘোলা। বড় বড় দাঁত আর মুখ দিয়ে লালা পড়ছিলো।
ওর মা ওকে জড়িয়ে ধরে, না মা তুমি ভুল দেখেছো।
ওর নানু দোয়া-কালাম পড়ে গায়ে মাথায় ফুঁ দিয়ে বললো, আর কোন সময় হাইঞ্জা বেলা ছাদে যাইওনা নানু। তাইলে জিন-ভুতে তোমার ক্ষতি করবো।
আমি বিষয়টা শালুর কল্পনা বলে উড়িয়ে দিলোম। কিন্তু তারপরও শুনলাম শালু নাকি ওই বিচ্ছিরি মহিলাকে প্রায়ই দ্যাখে। কখনো দ্যাখে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। কখনো দেয়ালের আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে। শালু যখন সবার সাথে থাকে তখনও দ্যাখে এইসব দৃশ্য, আর দৌড়ে সবার সাথে মিশে যায়।
ওর নানু বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে রিক্সা দূরত্বের পথ। একদিন আমিসহ সবাই ওর নানুবাড়ি থেকে বাসায় ফিরছিলাম। তখন বিকেল বেলা। একটা গলি পার হয়ে পিছনের মেইন রোডে উঠলে রিক্সা পাওয়া যায় বলে সে পথেই ঢুকেছি। হঠাৎ তাকিয়ে দেখি শালু একটু পেছনে আমাদের উল্টোদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত দিয়ে বললাম, চলো আম্মু।
আব্বু, ওই যে মহিলাটা দাঁড়িয়ে আছে। বলে গলির মুখের দিকে ইশারা করলো। আমি তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই ওখানে। ভালো করে তাকালাম। কিছুই দেখতে পেলাম না। শালু তবুও তাকিয়ে আছে। আমি শালুর দৃষ্টিপথে আবার তাকালাম। কিছুই দেখলাম না। কিন্তু মনে হলো গলির মুখে আবছা পর্দার মতো কিছু একটা দুলে উঠলো। আমার চোখের ভুল হয়তো সেটা। কিন্তু তারপরই শালু আমার হাত আঁকড়ে ধরে বললো, চলে গেছে ওটা, তোমাকে দেখে মনে হয় ভয় পেয়েছে।
কি জানি বাপু, কি সব অদ্ভূত কথা!
চার.
শালু এবার পঞ্চম শ্রেণিতে। পিএসসি পরীক্ষা শেষে ওর অখ- অবসর। ওকে আমি চোখে চোখে পাহারা দেয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। দিনের বেলা বেঘোরে ঘুমাবে, আর মাঝ রাত অবধি জেগে থেকে গল্পের বই, রহস্য উপন্যাস ইত্যাদি পড়ে কাটাবে। খাতার পর খাতায় পেন্সিল স্কেচে কমিক্স লিখতে ওস্তাদ সে। কমিকসের ডায়লগ সব ইংরেজি কিংবা জাপানী ভাষায় লেখা। জাপানী ভাষা ও কি করে আয়ত্ব করল বুঝতে পারছি না। জাপানী ভাষা কতটুকু হয় তা বোঝার ক্ষমতা আমার নেই। কিন্তু ইংরেজি ডায়ালগ পড়ে দেখেছি, অসম্ভব পরিণত ডায়ালগ ওগুলো। সবগুলো সাজালে ভালো কমিক্সের বই হতে পারে।
সেদিন রাত তিনটা-চারটার দিকে প্রচ- শব্দে আমাদের সবার ঘুম ভেঙে যায়। আমরা সবাই চোখ কচলাতে কচলাতে ওর রুমে গিয়ে দেখি, ও মেঝের ওপর যোদ্ধার ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে। ওর হাতে ধরা সেদিনের মতো একটা পাকানো লাঠি। মুখে বিজয়ের হাসি।
আমরা সবাই ওকে ঘিয়ে দাঁড়িয়েছি। ও আমাকে লক্ষ্য করে বলে ওঠে, আব্বু ওটাকে মেরে ফেলেছি। আমি আর সোলমেট ওটাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছি। সোলমেট ওকে ধরে আগুনের রশি দিয়ে বেঁধে ফেলেছিল, তাই সে পালাতে পারে নি। এই যে দ্যাখো, এখনো ওর তাজা রক্ত ফ্লোরে লেগে আছে। আমার সোলমেট অনেক শক্তিশালী, ফেরেশতার মতো। আমার আর ভয় নেই আব্বু, আর কোন ভয় নেই।
আমরা সবাই বোকার মতো হা করে তার কথা শুনছি। ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে দেখি ভিজে জবজবে হয় আছে ফ্লোরটা।