যেমন করে এলো বন্ধু দিবস

সেলিনা শামস

0
54

ছোট্ট একটি শব্দ বন্ধু। শব্দটি ছোট হলেও এর গভীরতা ব্যাপক। বন্ধুত্বের ব্যাপকতা সীমাহীন। বিশ্ব বন্ধুত্ব দিবস প্রতি বছর আগস্ট মাসের প্রথম রোববার বিশ্বজুড়ে পালন করা হয়। তবে এটাও ঠিক, বন্ধুত্বের জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিনক্ষণের প্রয়োজন নেই। বন্ধুত্বের কোনো বয়সসীমা নেই। সমবয়সীরাও যেমন বন্ধু হতে পারে, তেমনি বয়সে ছোট-বড়রাও বন্ধু হতে পারে। মনের মিল হলেই বন্ধু হওয়া যায়। বন্ধু দিবসের পরিকল্পনা ও উৎপত্তি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ১৯১৯ সালে সর্বপ্রথম আগস্ট মাসের প্রথম রোববার ‘বন্ধু দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়েছিল। বন্ধু দিবসে সেই সময়েও তারা নিজেদের মধ্যে কার্ড ও উপহার বিনিময় করতো। এভাবেই বন্ধু দিবসের উৎপত্তি।
অন্য আরেকটি মত হলো, ১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এক ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন ওই ব্যক্তির এক বন্ধু আত্মহত্যা করেন। সেই দিনটি ছিল আগস্ট মাসের প্রথম রোববার। তখন থেকেই তার আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে মার্কিন কংগ্রেস ১৯৩৫ সালের আগস্ট মাসের প্রথম রোববারকে ‘বন্ধু দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর বেশকিছু দেশ বন্ধু দিবস পালনের সংস্কৃতি গ্রহণ করে। এভাবেই এ দিবস পালনের পরিসর বাড়তে থাকে।
এ দিবস প্রসঙ্গে অভিজ্ঞজনরা মনে করেন, বেশিরভাগ দিবসের পেছনেই থাকে মর্মস্পর্শী কাহিনী। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বন্ধু দিবস প্রতিষ্ঠা হবার পেছনে নেই তেমন কোনো অমর বন্ধুত্বের উপাখ্যান। সম্পূর্ণ ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্য থেকেই বন্ধু দিবসের প্রচলন শুরু হয়। বিশ্বখ্যাত কার্ড ও উপহারসামগ্রী বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হলমার্কের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ‘জয়েস হল’ কার্ড বিক্রির জন্য দিনটি সামনে আনেন। এটি ১৯৩০ সালের কথা। প্রতি বছর আগস্টের ২ তারিখ যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধু দিবস উদযাপন শুরু হয়। কার্ড বিক্রি কয়েক বছর ভালো হলেই ধীরে ধীরে মানুষ এই দিবসের পেছনের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য বুঝতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এ দিবস পালন এক প্রকার থেমে গেলেও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শুরু হয় বন্ধু দিবসের প্রচলন। তবে সেটাও খুব বেশি আলোড়ন তোলেনি। এক এক দেশে এক এক সময় পালিত হতে থাকে দিবসটি।
আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালনের প্রথম উদ্যোক্তা হিসেবে ধরা হয় প্যারাগুয়ের চিকিৎসক ঋমান আর্থেমিও ব্রেচকে। ১৯৫৮ সালের ২০ জুলাই বন্ধুদের নিয়ে নৈশভোজে বন্ধু দিবস পালনের প্রস্তাব তোলেন। সে রাতেই বিশ্বব্যাপী বন্ধুত্বের ঐক্য ছড়িয়ে দিতে ঘোষণা করা হয় ‘ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ক্রুসেড।’
পরবর্তীতে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান ৩০ জুলাইকে বন্ধু দিবস ঘোষণা করেন। তবে জাতিসংঘ এদিন বন্ধু দিবস পালন করলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস হিসেবে পালিত হয়।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, এক জীবনে একজন মানুষের সঙ্গে গড়ে ৩৯৬ জনের বন্ধুত্ব হয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রতি ১২ জনে একজন টিকে থাকে। গবেষকদের মতে, বন্ধুরা কাছাকাছি থাকলে মানুষের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং তা রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। শিশুরা হাঁটা ও কথা বলা শেখার আগেই বন্ধুত্বের অনুভূতি টের পেতে পারে। একটি গবেষণায় বন্ধুদের মাঝে নাকি ‘জিনগত মিল’ পাওয়া গেছে!
জানা যায়, সেই গবেষণায় গবেষকরা ১ হাজার ৯৩২ জন মানুষের ওপর জরিপ চালান। আত্মীয়দের বাইরে তাদের বন্ধুবান্ধব ও অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে জিনগত বৈশিষ্ট্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণও করা হয়। একই সামাজিক পরিমণ্ডলের মানুষের জিনে প্রায় এক শতাংশ মিল পাওয়া যায়। আর অনাত্মীয় বন্ধুদের মধ্যে জিনগত মিল অনেকটা দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের সঙ্গে বিদ্যমান মিলের মতো। প্রসিডিংস অব দ্যা ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস সাময়িকীতে এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল।

‘বন্ধুত্ব’ ব্যাপারটা সব সম্পর্কের ক্ষেত্রেই প্রয়োজন। বন্ধুত্ব সম্পর্ককে সহজ করে। বলে কয়ে বন্ধুত্ব হয় না। মনের সঙ্গে মনের মিল হলেই শুধু সত্যিকারের বন্ধুত্ব হয়। বন্ধুত্বে অহংকার ও হিংসার স্থান নেই। ‘বন্ধুত্ব’ এমন একটা বিষয়, যা অনেক ক্ষেত্রে জীবনের চেয়েও দামি হয়ে দাঁড়ায়। এমন নজির পৃথিবীতে বহু আছে। বন্ধুত্ব এমন একটি সম্পর্ক যাতে এক বন্ধু বিপদে পড়লে আরেক বন্ধু না জেনে বুঝেও সব ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে।
তবে আজকাল এমন বন্ধুর সংখ্যা খুব বেশি নেই। এ সময়ে সত্যিকারের বন্ধু পাওয়া বা থাকা দুটোই ভাগ্যের ব্যাপার। কোনো কিছু পাওয়া যেমন কঠিন, তেমনি কাছে রাখার গুণটাও জরুরি। মনে রাখতে হবে, সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিচর্যার কোনো বিকল্প নেই। একপাক্ষিক কোনোকিছুই মজবুত হয় না। অবহেলা যেকোনো সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।