স্কুল থেকে ফেরার পথে ভ্যানগাড়িতে ঝুলানো খাঁচায় ছয়টি কবুতর দেখে মাহিন বায়না ধরলো ওগুলো নেয়ার জন্য। সাদা সাদা কবুতরগুলো বড়ই মায়া মায়া। তার মায়েরও ভালো লাগলো বলে সেগুলো কিনে বাসায় নিয়ে গেলেন। মাহিনের চাকুরিজীবী বাবা কবুতরগুলো দেখা মাত্রই খ্যাচ করে উঠলেন।
এই ঝামেলা ঘরে এনেছো? কে এর দেখাশুনা করবে শুনি?
আমিই করবো, মাহিনের মা বললেন।
অবশেষে বাড়ির ছাদে তাদের থাকার ঘর হলো।
আসলে সেই থেকে মাহিনের বাবা ওদের দেখাশুনা শুরু করলেন। আর আজও তা অব্যাহত রয়েছে।
কবুতরগুলো খুঁটে খুঁটে দানা খায়। মাহিন তার প্রিয় কবুতর নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে। ওদের ছোটাছুটি দেখে হাসে আর গান গায়। একদিন একটি পায়রা ডিম পাড়লো। পরের দিন আরো একটি। মাহিনের মনে আনন্দ বেড়ে গেলো বহু গুণ। তা দিয়ে আঠারো দিন পরে ফুটফুটে দুটি বাচ্চা ফুটালো। কত ছোট বাচ্চা! মাহিন ভাবতেও পারেনি। বাচ্চাগুলো মুখ হাঁ করে থাকে। পায়রা বাচ্চার মুখে ঠোঁট ঢুকিয়ে খাবার খাওয়ায়। দিনে দিনে বাচ্চাগুলো কেমন তরতর করে বেড়ে ওঠে। মাহিন দেখলো ছোট বাচ্চাটা একটু বড় হয়ে তারপর কেমন রোগা হয়ে যাচ্ছে। ওর সারা গায়ে গোটাগোটা দেখা দিয়েছে। কয়েকদিনর পর বাচ্চাটি মরে গেল। তাই মাহিনের খুব মন খারাপ হলো। স্কুল থেকে ফিরে দৌড়ে মাহিন ছাদে গিয়ে দেখে অপর বাচ্চাটি দ্রুত নিঃশ্বাস নিচ্ছে। এবং মাথা তুলতে পারছে না। রাতে সেই বাচ্চাটিও মারা গেল। মাহিনের কানড়বা দেখে মা-ও চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না।
হঠাৎ একদিন মাহিনের মামা এলেন বেড়াতে। সব ঘটনা শুনে তিনি বললেন, শোনো মানুষের যেমন রোগবালাই হয় পশুপাখিরও হয়। কবুতরের রোগের কারণ হলোÑ ভেঁজা, স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বসবাস। দূষিত বায়ুপ্রবাহের কারণে দূষিত পানির মাধ্যমে
কবুতরের ঠা-াজনিত রোগ হয়ে থাকে।
রোপ বা নিউমোনিয়া রোগ হয় শীতকালে যদি বসবাসের স্থান ভেজা থাকে তবে। যদি গলার মধ্যে বিশেষ করে ঠোঁটে কোনো ধরনের গুটি দেখা যায় বা যদি কবুতর এর শ্বাসকষ্ট দেখা যায় তবে বুঝতে হবে যে কবুতরটি নিউমোনিয়ায় আμান্ত। নিউমোনিয়া হলে অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা করা যেতে পারে।
ডাইরিয়াজনিত রোগ হয়। গোয়িং লাইট রোগে হয়।
ক্যাঙ্কার রোগ যা সাধারণত বয়স্ক কবুতরের দেখা যায়।
ম্যালেরিয়া হলে কবুতরটি আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায়। হাঁটতে পারে না ঘাড় বাঁকিয়ে চলাফেরা করে।
এছাড়া আছে পিজিয়ন পক্স। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। তবে পিজিয়ন পক্স-এর টিকা দিয়ে এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
একটা কথা মনে রাখবে কবুতরকে সব সময় পরিষ্কার পানি খেতে দেবে।
কবুতর একটি আদুরে পাখি। তাই এর ঠা-া লাগে বেশি। বাচ্চাগুলো একটু বড় হয়ে উঠলে এর যতড়ব করতে হয়। খেয়াল রাখতে হয় ওর বসার স্থানটা ভেজা কি না। শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা না হয় সে রকম শুষ্ক খাবার দিতে হবে।
প্রতিদিন কবুতরের খাদ্য, পানি, বাসস্থান ও স্বাস্থ্য দেখা উচিত। দরকার সঠিকভাবে যতড়ব নেওয়া। তবেই তো ওরা বেড়ে উঠবে।
মাহিনের বাবার একটি বিশেষ গুণ হলো মনোযোগ দিয়ে একটি কাজ করার সময় পাশে বশে আর একজন কী বলছে তাও শুনে বুঝে নেয়া। তিনি বুঝে গেছেন কবুতরের যতেড়বর কৌশল।
ছেলের খুশির জন্য তিনি কবুতর পালনের নিয়মকানুন মেনে চলতে শুরু করেন। আর তার কবুতরের বাচ্চাগুলো তরতর করে বেড়ে উঠতে থাকে এবং দিনে দিনে বাড়িঘর ভরে গেল অনেক কবুতরে।
এখন কবুতরগুলো মাহিনের বন্ধু হয়ে গেছে। ওকে ছাদে উঠতে দেখলেই সবাই উড়ে কাছে চলে আসে। হাতের ওপর মাথার ওপর উড়ে এসে বসে, মাহিন তাদের পালকে মায়ার পরশ বুলায়। ছেড়ে দিলে আবার ডানা ঝাপটে দূরে উড়ে যায়, শূন্যের ওপর ডিগবাজি খায়, আবার ফিরে আসে মাহিনের কাছে। ডানা মেলে কবুতরগুলো যখন আকাশে ওড়ে, মাহিন তখন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে
আর আনন্দে আত্মহারা হয়। কবুতরের মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানো দেখে মাহিন মনে মনে ভাবেÑ ইশ! আমি যদি ওদের মতো আকাশে উড়ে যেতে পারতাম ! কত স্বাধীন ওরা। কোথাও যেতে মানা নেই। শুধু ডানার ওপর ভর করে শূন্যে ভেসে থাকার কী যে আনন্দ তা শুধু ওরাই জানে।
আবার নিজেকে সান্ত¡না দেয়।
আমি তো মানুষ! আমার তো ডানা নেই! উড়বো কেমন করে?
আবার সে মনে মনে বলতে থাকেÑ
সত্যি! কবুতর হলো মহান আল্লাহর এক অপূর্ব সৃষ্টি।