চমকপুরের ভয়ংকর এক রাত

এস,এম, রফিকুজ্জামান আকিব

0
84

মিঠু ও তার ভাই ওভি চমকপুরে বেড়াতে এসেছে দু’দিন হলো। এই দুই দিনেই তারা পুরো গ্রামটার প্রায় পুরোটাই ঘুরে ফেলেছে, কিন্তু একটা জায়গা তাদের ঘোরা হয়নি। কারণ, তাদের বাবা-মা এবং গ্রামের লোক নিষেধ করছে সেখানে যেতে, সেখানে নাকি ভূত আছে। কিন্তু মিঠু সেটা বিশ্বাস করতে পারছিল না। ভাবল এগুলো সব গুজব। কিন্তু মিঠু ও ওভির খুব শখ আছে সেই বাড়িটায় যাওয়ার। তাও আবার রাতের বেলায়। সেই বাড়িটায় আজ রাতেই যাবে বলে তারা ঠিক করল। কিন্তু ওভি যেতে চাইল না। ওভির একটু বেশিই ভয়। কিন্তু মিঠু তাকে সাথে নিয়েই যাবে। ওভির আর কী করা কাউকে কিছু বলতেও পারবে না এ ব্যাপারে, তাই ওভি শেষ পর্যন্ত সেখানে যাবে বলে ঠিক করল। রাত ১১টা বেজে ৩০ মিনিটে পড়ল। এমন সময় মিঠু ও ওভি এসে উপস্থিত হলো তাদের গ্রামের বাড়িটার সামনে। এবার তারা হাঁটা শুরু করল। চারপাশে আগাছা আর গাছে ভরা। মিঠু ও ওভি হাঁটছে। তাদের পায়ের শব্দের প্রতিধ্বনি হচ্ছে গটগট করে। এই শব্দেই বার বার ভয় পেয়ে যাচ্ছে ওভি। তারা এসে সেই ভুতুড়ে বাড়িটার সামনে উপস্থিত হলো। বাড়টা দেখেই ওভি রীতিমতো অবাক হয়ে উঠল।
ওভি তার সাথে করে একটা টর্চ লাইট নিয়ে এসেছে, সেই টর্চ লাইটের আলোয় তারা বাড়িটা দেখল, বাড়িটার দেয়ালে মস পড়ে গেছে এবং এখান-থেকে-ওখান থেকে অল্প অল্প করে দেয়ালের ইট ভেঙে পড়েছে। দেখেই ওদের ভয় লাগল। এটা ভুতের ভয় না, ভয় লাগল অন্য জায়গায়, সেটা হলো ওরা বাড়িটার ভেতরে থাকা অবস্থায় যদি বাড়িটার দেয়াল ভেঙে পড়ে। কিন্তু তবুও এগুলোর ভয় তাদের সাহসকে পরাস্ত করতে পারল না। তারা বাড়ি ভাঙার কথা আর মনে না করেই, বাড়িটার ভেতর ঢুকে পড়ল। ঢোকার সাথে সাথে অবাক হলো। একেকটা রুম বিশাল বিশাল এবং দেয়ালে খুব সুন্দর করে নকশা আঁকা। তারা আস্তে আস্তে বাড়িটার ২য় তলায় উঠল। ২য় তলায় উঠেও তারা অবাক হয়ে গেল। তারা দেখতে পেল একটা কালো সাপ। সাপটা তাদের দিকেই ছুটে আসছে। তারা তাড়াতাড়ি সাপটির কাছ থেকে যতটুকু সম্ভব সরে গেল। ওভি বলল, ‘বাবা বাঁচলাম’। মিঠু বলল, এতো ভয় পেলে হবে না ওভি সাহসী হতে হবে। ‘ওভি এই কথাটা শুনে বলল, আচ্ছা বুঝেছি এবার চলো’। এবার তারা উপরের একটা রুমে ঢুকল। তারা এক লোককে দেখতে পেল। দূর থেকে তাকে একদম কালো ভূতের মতো দেখাচ্ছে। মিঠু ও ওভি দেখল, লোকটা কালো রংয়ের একটা জ্যাকেট পরা। ওভি লোকটাকে দেখে ভয়ে কেঁদেই দিচ্ছে বলতে গেলে। মিঠু ওভিকে আস্তে আস্তে বলল, ‘এখন কেঁদো না! মনে সাহস রেখে, আস্তে আস্তে ওই লোকটার দিকে চলো। ওভিও আস্তে করে বলল, আচ্ছা চলো। মিঠু ও ওভি দেখল, কালো জ্যাকেট পরা লোকটার পেছনে একটা বড় পিলার। পিলারটার ওপর থেকে একটু ভাঙা। মিঠু বলল, আমরা এখন ওই পিলারটার পেছনে লুকিয়ে দেখব, ওই কালো জ্যাকেট পরা লোকটা কী করছে? ওভি বলল, ঠিক আছে। তারপর, মিঠু ও ওভি আস্তে আস্তে, পা টিপে টিপে, শব্দ না করে ওই পিলারটার পেছনে গেল। মিঠু আর ওভি দেখল, ওই কালো জ্যাকেট পরা লোকটা একটা ভাঙা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো এসে ওই কালো জ্যাকেট পরা লোকটার শরীর এবং মুখের ওপর পড়ছে। চাঁদের আলোয় কালো জ্যাকেট পরা লোকটার শরীর এবং মুখ খুব ভালো করে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মিঠু ও ওভি ওই কালো জ্যাকেট পরা লোকটাকে ভালো করে দেখতে পেল না। কারণ তারা রয়েছে ওই কালো জ্যাকেট পরা লোকটার পেছন দিকে। মিঠু আর ওভি দেখল, ওই কালো জ্যাকেট পরা লোকটা তার ফোন নিয়ে কাকে যেন ফোন করছে। কালো জ্যাকেট পরা লোকটা ফোন করে আরেকজনকে বলল, এই বাড়িটায় যদি আর কেউ আসে, তাহলে তাকেও ফিনিস করে দিবি। সে যেই হোক না কেন! এই বলে কালো জ্যাকেট পরা লোকটা ফোনটা কেটে দিলো। এরপর ওই কালো জ্যাকেট পরা লোকটা পেছন দিকে ফিরল। লোকটা পিছন দিকে ফেরায় মিঠু ও ওভি লেকটার চেহারা দেখতে পেল। মিঠু ওভিকে বলল, আমি এই লোকটাকে আগে দেখেছি। এই লোকটাকে আমি পত্রিকায় দেখেছি। এই লোকটা হলো এই শহরের নামকরা ডাকাত দলের প্রধান জুবায়ের। জুবায়েরের কথা এবং মিঠুর কথা শুনে ওভির খুব ভয় লাগছে। মিঠু বলল, আমারও এখন একটু ভয় করছে। কিন্তু আমরা এখন ফেঁসে গিয়েছি। এখন আমরা এখান থেকে বের হতেও পারব না। শুনলে না ফিনিস করে দেবে। অর্থাৎ এই বাড়িতে কেউ ঢুকলে তাকে মেরে ফেলবে। ওভি বলল, যখন ফেঁসেই গিয়েছি এই জুবায়ের এবং ডাকাত দলের শেষ দেখেই ছাড়ব। মিঠু ও ওভি কথা বলতে বলতে এক মিনিট হয়ে গেছে। মিঠু ওভিকে বলল, ওভি আমাদের ওই লোকটাকে ফলো করতে হবে। আমার মনে হয় ওই ডাকাত-ই এই বাড়িটায় আস্তানা গেড়েছে। এইটাই হলো এই বাড়ির রহস্য। এই ডাকাতরাই ভূত সেজে মানুষকে ভয় দেখায় এবং তারপর মেরেও ফেলে। এই রহস্যটা সমাধান করতেই হবে আমাদের। না হলে আরো অনেক মানুষ মারা যাবে। ওভি মিঠুকে বলল, আচ্ছা। এবার চল। নাহলে লোকটা পালিয়ে যাবে। মিঠু ও ওভি দেখল, ডাকাত নিচে নামছে। মিঠু এবং ওভিও তার পিছু পিছু নিচে নামল। মিঠু ও দেখল, ডাকাত দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। মিঠু দ্রুত ওভিকে বলল, এই ওভি দেখ তোর পায়ের সামনে শক্ত-মোটা একটা লাঠি। ওই লাঠিটা দিয়ে তাড়াতাড়ি ডাকাতের মাথায় বাড়ি মার। ওভিও তাড়াতাড়ি লাঠিটা দিয়ে জুবায়েরের মাথায় বাড়ি দিলো। সাথে সাথে ডাকাত অজ্ঞান হয়ে গেল। এবার মিঠু ওভিকে বলল, এই ওভি আমি এই ডাকাতকে দেখে রাখছি তুই তাড়াতাড়ি বড়দের ডেকে নিয়ে আয়। ওভি বড়দের ডাকার জন্য গ্রামে গেল। ওভি বড়দের ডাকতে গেছে ২৫ মিনিট হয়ে গেল মিঠুর চিন্তা হচ্ছে, ভাবছে এখনো কেন ওভি এলো না! মিঠু দেখল ডাকাত দলের সব সদস্য এই বাড়িটায় ঢুকছে। মিঠু তাড়াতাড়ি একটা টেবিলের পেছনে লুকিয়ে পড়ল। যখন ডাকাত দলের সব সদস্য ওই বাড়িটায় ঢুকল, তখনই ওভি পুলিশ এবং বড়দের নিয়ে হাজির হলো। পুলিশ ডাকাতদের হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে চলে গেল। মিঠুও বেরিয়ে এলো টেবিলের নিচ থেকে। ওভি বলল, ও ওই যে মিঠু। আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম। মিঠু বলল, আমরা পেরেছি। আমরা সফল। বড়রা মিঠু ও ওভির খুব প্রশংসা করল এবং তাদের সাথে একমত হলো যে এই বাড়িতে কোনো ভূত ছিল না!
পঞ্চম শ্রেণি, খুলনা জিলা স্কুল