হাতেমের উপহার

মুহাম্মদ তাসনীমুল হাসান

0
23

অল্প বয়সী হাতেম। একটি ধনী পরিবারে তার জন্ম। সে বাবার একমাত্র ছেলে। শিশুকাল থেকেই সে খুব উদার মনের ছিল। কাউকে কষ্টে দেখলে, ঘরের জিনিস দিয়ে সাহায্য করত সে। দরজায় কেউ হাত পাতলেই হলো, সাহায্য করতে তার দেরি নেই। তার এসব কাজে তার বাবা খুব বিরক্ত হতেন। একদিন রেগে গিয়ে বলেন,
কিরে বাবা! এভাবে দান করতে থাকলে তো আমাদের সব শেষ হয়ে যাবে। পরে আমরা খাবো কী? এভাবে যে আমরা নিস্ব হয়ে যাবো!
এই বলে বাবা চলে গেলেন। বাবা প্রায়ই ছেলে হাতেমকে তা বোঝাতেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সে তার কাজ চালিয়েই যায়। বাবা হাতেম কে নিয়ে তো পড়লেন মহা সমস্যায়। আনেক ভেবেচিন্তে, একদিন হাতেমকে পাঠিয়ে দিলেন এক উটের পালের সাথে। সেখানেই সে তাঁবু টানিয়ে সময় কাটাতো। দিনভর পাল চড়িয়ে রাতে বাড়ি ফিরত। তাই দান খয়রাতের জন্য সময় আর পায় না। সেখানেও তেমন কোনো লোক নেই। তার মন আনচান করতে থাকে। আপেক্ষায় থাকে, কখন মেহমান আসবে।

তার পর ঘটলো এক মজার ঘটনা। হাতেম তার প্রতিদিনের মতো তাঁবুতে বসে সময় কাটাচ্ছে। হঠাৎ লক্ষ করল, দূরে তিনজন লোক পথ ধরে কোথাও যাচ্ছে। তার ধারণা, লোকগুলো ভ্রমণকারী হতে পারে। তখনই তাদের পিছু পিছু দৌড়ে গিয়ে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে হাঁপিয়ে উঠল। লোকেরা তাকে দেখে থমকে দাঁড়াল তারা নাকি দূর দেশের যাত্রী অপরিচিত জন। হাতেম তাদেরকে জিজ্ঞেস করলÑ
ভাইসব! আপনারা দূরে কোথাও যাচ্ছেন? ভ্রমণকারী আপনারা? আপনাদের সেবা করতে পারলে আমি খুশি হবো। যদি আমার তাঁবুতে আসেন, তাহলে মেহমানের অন্তত সেবা করতে পারতাম।
হাতেম তাদের চিনত না। তার পরও এত আন্তরিকভাবে দাওয়াত দিচ্ছে। এদেখে যাত্রীরা হতবাক। অবশেষে তারা তাঁবুতে যেতে রাজি হলো এবং বিশ্রাম করল। এদিকে হাতেম পাল থেকে তিনটি উট নিয়ে জবাই করে ফেলে। তার কাÐ দেখে অতিথিরা বলল,
আমরা তো মাত্র তিনজন। একটি হলেই তো যথেষ্ট ছিল। আপনি খামোখা তিনটি জবাই করেছেন!

আমার ধারণা, আপনারা তিনজন তিন দেশের। আপনাদের পোশাক তাই-ই বলছে। তাই তিন দেশের সম্মানে তিনটি উট জবাই করেছি। কিছু মনে করবেন না।
হতেমের এত আন্তরিক আপ্যায়নে মেহমানরা তৃপ্ত মনে, তৃপ্তির সাথে খাওয়া-দাওয়া করল। খেয়েদেয়ে রাতভর তাঁবুতে খোশগল্প করে কাটালো। পর দিন ভোরবেলা। মেহমানরা হাতেমের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নিলেন। এমন সময় ঘটলো আরেক অবাক কাÐ! হাতেম তাদেরকে বললÑ
আপনারা চলে যাবেন বলে খারাপ লাগছে। বেশি আর কী আপনাদের সেবা করতে পেরেছি। তাই এই নিন, আপনাদের জন্য একটি ছোট্ট উপহার। যদি গ্রহণ করতেন, খুশি হতাম।

মেহমানরা হাতেমের উপহার দেখে তো রীতিমতো অবাক ! নিজেদের মধ্যে কানা-কানি করতে লাগলো, কী করছে লোকটা? নাম নেই, পরিচয় নেই, তার পরও এত আদর-আপ্যায়ন, আবার এক পাল উট উপহার হিসেবেও? বলে কী লোকটা? তারা বলে উঠলোÑ
না না, উপহার কেন? আর আপনি তো আমাদের অনেক আতিথেয়তা করেছেন। আমাদের ক্ষমা করুন ভাই।
এই বলে সামনে এগোতে লাগলো তারা। হাতেম হলো নাছোড়বান্দা কথা কি শোনে? সে তাদের উদ্দেশ্যে বললÑ
দেখুন ভাইসব! আপনারা না করবেন না। যদি এগুলো গ্রহণ না করেন তাহলে, বাকি সবগুলোকে মেরে ফেলব।

মেহমানরা নিরুপায় হয়ে সেই ছাগলে পাল উপহার হিসেবে গ্রহণ করল। মেহমানরা তা নিয়ে পথ চলতে শুরু করল। আর হাতেম দু’চোখ জুড়িয়ে মেহমানদের বিদায়ের দৃশ্য উপভোগ করতে লাগল। তার পর সে খালি হাতে বাড়ি ফিরল। অনেক দিন পর একটু দান করতে পেরে, তার অশান্ত মনে আজ শান্তির মৃদু আভায় মনটা ভরে গেল।