স্বাধীনতার ৫০ বছরে

শাকের জামিল

0
39

প্রিয় বন্ধুরা, সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। ২০২০ সাল আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে। গত বছরটি ছিল করোনা অতিমারীতে বিপর্যস্ত। তোমাদের স্কুল বন্ধ ছিল। খেলার মাঠ বন্ধ ছিল। সবাই মিলে একত্রে আনন্দ উৎসব করা বন্ধ ছিল। অনেকের প্রিয়জন, কাছের মানুষ আত্মীয় মৃত্যুবরণ করেছে এই করোনায়। অনেকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরম করুণাময়ের কাছে আমরা সবাই প্রার্থনা করি যেন আমরা নতুন বছরে এ ধরনের পরীক্ষা বা দুর্ভোগের শিকার না হই।
নতুন বছর ২০২১ সাল। আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি এই বছরেই। বাংলাদেশ নামক একটি স¦াধীন রাষ্ট্রের জন্ম হবার ৫০ বছর। ভাবতেই ভালো লাগে যে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী হতে যাচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে স্বাভাবিকভাবেই নিজেকে প্রশ্ন করতে হয়, কেমন ছিলাম, কেমন আছি?
৫০ বছর আগে দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট কেমন ছিল? বেশি কিছু করতে হবে না। ৫০ বছর আগের তোলা ছবিগুলো দেখলেই তখনকার মানুষের পরিস্থিতি বুঝতে পারবে। মানুষ ছিল অতি দরিদ্র, শিক্ষার হার ছিল কম। প্রাকৃতিক দূর্যোগ আর রোগ শোকে ভরা ছিল জীবন। সেখান থেকে এখন মানুষের আর্থিক উন্নতি হয়েছে, সামাজিক উন্নতি হয়েছে। ২০২০ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায় বাংলাদেশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে তৃতীয় অবস্থানে আছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে অষ্টম অবস্থানে আছে। এছাড়া ইলিশ উৎপাদনে প্রথম, তৈরী পোশাক (গার্মেন্টস) রপ্তানিতে দ্বিতীয়, চাল উৎপাদনে চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, জনশক্তি রপ্তানি এবং আউটসোর্সিংএ অষ্টম অবস্থানে আছে।
কিন্তু এত বছরেও দেশের ব্যাপারে আমাদের নেতিবাচকতার পরিবর্তন হয়নি। দেশি জিনিস মানেই খারাপ এবং বাংলাদেশী মানেই খারাপ মানুষ এই চিন্তা আমাদের মাথায় বদ্ধমূল হয়ে আছে। এই চিন্তার কারণেই আমরা একে অন্যকে ঠকাই। কিন্তু কেন আমাদের এই নেতিবাচক চিন্তা? কেন আমরা পরস্পরকে শ্রদ্ধা করতে পারি না?
যেকোনো জাতির উন্নতির জন্য সে জাতির নৈতিক অবস্থান উন্নত হতে হয়। আমাদের পারস্পরিক আস্থাবিশ^াস এবং শ্রদ্ধাবোধ যদি উন্নত না হয়, তাহলে আমরা আর্থিক উন্নতি ধরে রাখতে পারব না।
সেজন্য প্রয়োজন নিজের বা নিজেদের যা কিছু আছে তার বিষয়ে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করা। যেমন ধরো, তুমি এলাকার একটি স্কুলে পড়ো। সে স্কুলের বিষয়ে তোমার চিন্তাভাবনা কি? বন্ধুবান্ধবদের সাথে আলাপ করার সময় কি তুমি স্কুলের দুর্নাম করো? ‘আরে, আমাদের একটা স্কুল হলো নাকি? এই স্কুলে এটা নাই, সেটা নাই, স্কুলের টিচারদের কোনো ঠিকঠিকানা নাই’ ইত্যাদি কথাবার্তা কি সবসময়ই তোমরা আলোচনা করো? তাহলে এটা নেতিবাচক ধারণা। স্কুলের অনেক কিছু না থাকতে পারে, কিন্তু স্কুলের শিক্ষক এবং স্টাফরা তোমাদের জন্য অনেক পরিশ্রম করেন, তোমাদের ভালোবাসেন। সেই দিকটি বিবেচনায় রেখে স্কুল সম্পর্কে ভালো কথা বলা উচিত। হ্যাঁ, স্কুলের ত্রুটি কী আছে তা নিয়ে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবে, তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ বা আবেদন করবে। কিন্তু পাবলিক জায়গায় নেতিবাচক আলোচনা করবে না।
বাঙালি মানেই খারাপ, বাঙালি মানেই চিটার, বেইমান, দুই নম্বর। কথাটি কি সত্য? কত শতাংশ লোকের ক্ষেত্রে সত্য? তাহলে সবাইকে কি খারাপ বলা ঠিক হচ্ছে? পৃথিবীর এক ’শটিরও বেশি দেশে বাংলাদেশে তৈরি ওষুধ বিক্রি হচ্ছে, রপ্তানি হচ্ছে। তারা যদি বিশ^াস না করত, বা বাংলাদেশীরা যদি দুই নম্বর ওষুধ রপ্তানি করত, তাহলে কি তারা সেগুলো নিতো? অবশ্যই না। বিদেশে বাংলাদেশী শ্রমিকদের কদর বেশি। কারণ বাঙালিরা আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করে। কিন্তু আমাদের দেশে আমরা নিজেদের নামে সবসময় দুর্নাম করি।
আমরা দুজন একত্রিত হলে কী আলোচনা করি? শুধু অন্যের বদনাম। অথচ দুজন মিলে যদি গঠনমূলক কিছু আলোচনা করতে পারতাম তাহলে অনেক এগোতে পারতাম। স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের অন্তত একটি শপথ করা উচিত যে দেশকে নিয়ে অহেতুক দুর্নাম করবো না। নিজেদেরকে আর খাটো করব না, নিজেদের নিয়ে ট্রল করব না। বিদেশীরা বাংলাদেশকে নিয়ে ট্রল করে, নিজেদের দেশকে নিয়ে কেউ ট্রল করলে আবার তারা তীব্র প্রতিবাদ করে। অথচ আমরা বাংলাদেশীরাই বাংলাদেশকে নিয়ে ট্রল করি। কৌতুক করে নিজেদের খাটো করি। এতে আমাদের মানবিক মর্যাদাকে আমরা ছোট করে রাখি। আর এই বদ অভ্যাস আমাদের হীনম্মন্য করে তোলে। আমাদের সাহসকে দমিয়ে রাখে। বড় স্বপ্ন দেখতে আমরা হোচট খাই। অথচ বড় হওয়ার প্রথম ধাপ হলো বড় স্বপ্ন দেখা।
সাড়ে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লাখো শহীদের প্রাণ এবং লাখো মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ। এই মানচিত্রের প্রতি শ্রদ্ধা অবশ্যই দেখাতে হবে। এই দেশটিকে ভালোবাসতে হবে। সেই ভালোবাসা অন্তর থেকে নেতিবাচকতা দূর করে দিয়ে দেখাতে হবে।

শপথ নিতে হবে নিজে দেশের জন্য কিছু করব। দেশের যে ঘাটতি, যে দুর্বলতা আছে তা পূরণ করতে আমরা নিজেরা এগিয়ে আসব। আমাদের প্রত্যেকের বিন্দু বিন্দু প্রচেষ্টায় দেশ একদিন বিশ্বের বুকে সেরা দেশের তালিকায় স্থান নেবে।