সোনালি হাঁস

জান্নাতা নিঝুম শিল্পী

0
130

বনের ধারে বড় একটি দিঘি। দিঘির পাড়ে বিশাল বট গাছ।গাছের ডাল-পালা ছেয়ে আছে দিঘির সিঁথান জুড়ে বুড়ো মানুষের দাঁড়ির মতো ঝুলে আছে গাছের শেকড়গুলো।বট গাছের নিচে একটি কোটরে অনেকদিন ধরে বাস করে আসছে একটি রাজহাঁস!
হাঁসটির গায়ের রং দেখতে সোনালি,তাই অই বনের পশুপাখি,গাছপালা, দিঘির মাছ,আর শাপলাগুলো তাকে সোনালি হাঁস বলেই ডাকে। সবার সাথে তার একগলা ওঠাবসা! হাঁসটি দেখতে যেমন সোনার মতো, তেমনি পালকগুলো মোলায়েম, তার নাদুসনুদুস গা রোদে চিকচিক করে।দেখলেই মন ভরে যায়।হাঁসটি সারাদিন দিঘির জলে গা এলিয়ে ঘপঘপ করে ডুব দেয়। মাছেদের সাথে গল্প করে,লতা থেকে বেড়ে ওঠা শাপলাগুলোর সাথেও গল্প করে।কলমিগুলোর সাথে শরীর জড়িয়ে রাখে সারাক্ষণ । সন্ধ্যা হলে তবেই কোটরে ফিরে।
একদিন হাঁসটি দিঘির জলে গোছল করতে নামল, সবার সাথে গল্প করতে করতেই, বড় রুই মাছের পোনাটি বলে উঠল ও হাঁস মামা বলোনা তোমার গায়ের রং এমন সোনার মতো হলো কিভাবে?অমনি হাঁসটি একতোড়া হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলল,সে অনেক কথা বাবু। তুমি ছোট ওসব শুনতে নেই,পোনাটি তখন বায়না করে বসল।
বলল,না বলতেই হবে,বলো।তখন, মাছেরা এবং বেড়ে ওঠা জঙ্গলী ফুলেরা বলল,বলো না সোনালি হাঁস, তোমার সোনার মত রূপ হলো কিভাবে। হাঁসটি তখন বলল,তাহলে শুনো-একদিন সকালে আমি ঘুম থেকে উঠে প্বু আকাশে চেয়ে লাল সূর্যটা দেখছিলাম! হঠাৎ দেখি একটি ঈগলের ছানা রক্তাক্ত হয়ে আমার কোটরের সামনে
এসে পড়ল।কেমন চিঁচিঁ করে কতরাচ্ছে! আমি তাড়াতাড়ি কোটর থেকে বেরিয়ে দেখি মরমর অবস্থা! শিকারীর তীর লেগেছে ডানায়।
কোন মতে এখানে পালিয়ে এসেছে। আমি ছানাটিকে অনেক আদর করে বুকে তুলে নিলাম। তারপর কোটরে নিয়ে বিছানা করে দিলাম শোবার জন্য।তীরটা ডানা থেকে বের করে লাগিয়ে দিলাম কিছু, ভেষজ লতাপাতার রস । মাথায় পানি ঢাললাম। ধীরেধীরে ছানাটি সুস্থ হয়ে উঠল।
এদিকে ওর মা ওকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিল।
কিছুদিন পর খোঁজ পেয়ে আমার কোটরে চলে আসল। আমি কিছু না বলতেই এইটুকুন ছানাটি তার মাকে সব কথা বলে দিল।
তখন মা ঈগল আমার ওপর খুশি হয়ে বলল, তুমি আমার প্রাণপ্রিয় ছানাকে বাঁচিয়েছ। তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তুমি কি চাও আমার কাছে? বলো। আমি লজ্জিত গলায় বললাম, আমার কিছুই চাই না। এটা আমার দায়িত্ব ছিল। অন্যের বিপদে সাহায্য করা। আমার কথায় মুগ্ধ হয়ে মা ঈগল বলল, আমি তোমাকে উপহার দেব, এসো তুমি। আমার ডানায় চড়ে বসো। আমার কোন কথা শুনলো না। শেষ মেশ আমি মা ঈগলের গা বেয়ে পিঠে উঠলাম! তখন মা ঈগল শাঁ শাঁ করে উড়তে লাগল আকাশের পথ চিরে। আমাকে নিয়ে গেল এমন পরিবেশে, যা আমি কখনো দেখিনি। থামল গিয়ে এক আজব জায়গায়! দেখে আমার গা ছমছম করে উঠল।
পরিবেশটা কেমন শুনশান! মনে হলো এখানে কোন জনমানবের ঠাঁই নেই।গাছগাছালি আর জড়োসড়ো লতাপাতায় ভরপুর আজব জায়গাটি।
মা ঈগল আমাকে বলল এদিকে এসো।আমি যেতে যেতে দেখি সামনে একটি ঝকমকে পুকুর, সোনার মত জ্বলজ্বল করছে। মা ঈগল বলল এখানেই আমরা থাকি। ঐ পুকুরে নেমে একটি ডুব দিয়ে এসো। আমি আস্তে আস্তে পুকুরের কাছে গেলাম। সিঁড়ি দিয়ে নেমে পুকুরের মাঝে গিয়ে একটি ডুব দিলাম। অমনি আমার সাদা পালকগুলো সোনার মতো ঝিকঝিক করে জ্বলতে লাগল। আমি তো অবাক! পুকুর থেকে উঠে আসলে মা ঈগল বলল, এটা যাদুর পুকুর।
আজ থেকে তুমি সোনার মত দেখতে হলে,যতদিন বাঁচবে কোনদিন তোমার চেহারার রং ফুরাবে না। সবাই তোমাকে সোনালী হাঁস বলে ডাকবে।
সেদিন মা ঈগলের কাছ থেকে আনন্দে বিদায় নিলাম।
সোনালী হাঁসের এই সুন্দর কাহিনি শুনে সবাই খুশি হলো। রুইয়ের পোনাটি লেজ নেড়ে লাফাতে লাফাতে বলল, আমরাও যদি তোমার মত হতাম!