সম্পূর্ণ উপন্যাস । সাদা পাথরের কান্না

সোলায়মান আহসান

0
163

বরটা জেনে বিশ্বাস হতে চায়নি। এমন ঘটনা জীবনে এই প্রথম শোনা, মালা চাচীকে কে বা কারা ছাদ থেকে নিচে ফেলে দিয়েছে। মারাত্মক আহত হয়ে তিনি মেডিক্যালে ভর্তি।

মালা চাচী নাকি দুপুরে গোসল সেরে ভেজা কাপড় রোদে শুকাতে দিতে গিয়ে ছিলেন। এমন সময় একটা দমকা হওয়া আসে। দক্ষিণ দিক থেকে। এর পর অদৃশ্য হাত চাচীকে পাঁজাকোলা করে বাড়ির পেছনে উড়িয়ে ফেলে।
ওই বাড়ির পেছনে। সবজির বাগানে। চাচী পড়ে ছিলেন বেহুঁশ হয়ে। কতক্ষণ তা কেউ জানে না।
কী প্রয়োজনে বাড়ির কাজের মেয়ে ফরিদা বাগানে গিয়ে দেখতে পায় চাচীকে। নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে।
হুশ নেই। ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে দৌড়ে এসে খবর দেয় শাহরিনকে। শাহরিন তার আব্বুকে সঙ্গে নিয়ে বাগানে এসে দেখে পরে আছে তার আম্মু। বেহুঁশ হয়ে।

‘ইয়াল্লা আম্মুর কিতা অইছে’ শাহরিনের চিৎকার কান্না। দৌড়ে আসে আইরিন।
ছোট চাচীরা। সবাই মিলে ধরাধরি করে ঘরে এনে শুইয়ে দেয়।
হুশ ফেরাতে মাথায় পানি ঢালতে থাকে। শাহরিন আইরিন দু’বোন মিলে। স্থানীয় ডাক্তার বিশ্বমিত্রকে খবর দেয়া হয়। সুজন স্ট্যান্ডবাই থাকা একটা গাড়ি নিয়ে এক ঘন্টার মধ্যে নিয়ে আসে ডাক্তারকে। ইনজেকশন পুশ করার পর জ্ঞান আসে। কিন্তু গায়ে প্রচ- ব্যথা। ডাক্তারের পরামর্শে প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট দেয়ার পর নিয়ে যাওয়া হয় সিলেট।
ইতোমধ্যে মালা চাচীর ছেলে শাহাবকে খবরটা দেয়া হয়। সে মেডিক্যাল স্টুডেন্ট। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ফাইনাল ইয়ারে। তার মেডিকেল কলেজের হসপিটালেই চাচীকে ভর্তি করা হয়। যাতে শাহাব সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করতে পারে। পরে জানা যায় চাচীর একটা হাত একটা পা এবং বুকের পাজরের হাড় দু’খান ভেঙেছে। তবে মাথায় তেমন আঘাত না লাগায় ব্রেন একদম ঠিক আছে।

টেলিফোনে শাহরিন দুপুরে খবরটা দেয় কান্না বিজড়িত কন্ঠে। ঘটনা এর আগের দিনের। তুতুলের সাঙ্গে কথা হয় শাহরিনের।
ব্যস, এরপর চলে টেলিফোনের পর টেলিফোন। এ প্রান্ত ও প্রান্ত উভয় প্রান্ত থেকে।
মালা চাচী এদের খুব প্রিয়। আব্বুর ফুপাত ভাই আনছার চাচার বউ। ভীষণ ভালো মানুষ তিনি। বেড়াতে গেলে এদের এটা ওটা বানিয়ে আনিয়ে খাওয়াতে ব্যস্ত শুধু হন না, এখানে সেখানে বেড়াতে নিয়ে মাতিয়ে রাখেন তিনি। তেমনি মেয়ে দু’টোও হয়েছে মায়ের মতো মিশুক। আর মেহমানদারি কাকে বলে!
তুতুল-পুতুল-আফিফরা এখন বেড়ানোর কথা এলেই নিজেদের গ্রামের বাড়ি বাদ দিয়ে আব্বুর ফুফুর বাড়ির কথা আগে তোলে। এইতো গ্রীষ্মের ছুটিতে ওই চাচীর বাড়িতে যাওয়ার কথা উঠেছিল। গেল বছর হেমন্তেও ওরা মালা চাচীর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসেছে। সেবার একটা জায়গায় ওদের যাওয়া হয়নি। চাচী বলেছিলেন- তোমরা আগামী গ্রীষ্মের ছুটিতে আসিও, নিয়া যাইব। শাহাবরে খবর দিয়া আনিব।

সেই চাচীর এমন অবস্থা দুর্ঘটনার খবর শুনে ওদের মন খারাপ হবে না? এখন ওরা চাচীর জন্য উদ্বিগ্ন। কিভাবে ঘটল এমনটা? কে ছাদের উপর থেকে চাচীকে ফেলল? চাচাদের মধ্যে ভাইয়ে ভাইয়ে খুব মিল। তবে এক চাচী নাকি একটু হিংসুটে। কিন্তু একটা মানুষকে তোলে ছুঁড়ে মারতে হলে অনেক শক্তি দরকার। তেমন শক্তি কি কোনো মেয়েলোকের গায়ে থাকে?

তুতুল বার বার জানতে চায় চাচীকে কে বা কারা ফেলল? জবাবে শাহরিন বলল, আম্মু তেমন কিছু বলতে পারেন না। শুধু বলেছেন একটা দমকা বাতাস এসে তার গায়ে লাগতেই তাকে কে যেন শূন্যে তুলে ফেলে দেয়। ধপাস একটা শব্দ কানে আসে।

তাহলে কি এটা জিনের কাজ? তুতুল পাল্টা প্রশ্ন করেছিল। শাহরিন জবাবে বলেছিল, জ্বীনের হইতে পারে। পেরতের ও হইতে পারে। পেরত মানে ভূত-প্রেত: বলি আর কি।
জিনের কথাতো কুরআনে আাছে। জ্বীন বিশেষ করে দুষ্ট জ্বীনরা মানুষের ক্ষতি করতে চেষ্টা করে। ইবলিস তো জ্বীন ছিল। কিন্তু ভূত প্রেতের কথা শুনেছে ঠিক, এর সম্পর্কে তেমন সঠিক জ্ঞান বা ধারনা তুতুলের নেই। বিশ্বাস ও তেমন করে না এদের অস্তিত্ব।

পাল্টা প্রশ্ন করেছে, পেরত বা প্রেত ওইটা আবার কি? আছে নাকি?
Ñ‘আছে-আছে এইবার আমিও দেখাইমুনে’ শাহরিনের কথায় একটা দৃঢ় বিশ্বাসের ঘ্রাণ পাওয়া গেল। হয়তো আছে। হয়তো নেই।
বাসায় চাচীর ব্যাপারটা নিয়ে তুমুল আলোচনা করা, খবর নেয়ার মধ্যেই কি আমরা সীমাবদ্ধ থাকবো? প্রশ্নটা তুতুলের আব্বুকে উদ্দেশ্য করা হয় খেতে বসে।
Ñ ‘ঠিক বলেছ আম্মু, মালা চাচীকে দেখতে যাওয়ার দরকার-পুতুল বলে উঠল। খাওয়ার টেবিলে সেও ছিল।
দেখতে যাওয়া বললেই তো যাওয়া যায় না, আমরা সবাই শিকল দিয়ে বান্দা না? রায়হান রহস্য করে বলল।
শিকল! কোথায় শিকল আব্বু? আফিফ বলল খাওয়া মুখে না তুলে।
Ñ হুম! অদৃশ্য শিকলে বান্দা আমরা, তোমার আম্মুর স্কুল, আমার চাকরি, তোমাদের স্কুল, এই সব শিকল আরকি। একটু বিজ্ঞের হাসি হাসলো রায়হান।
এত বড় দূর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা কেউ যাবো না? খোশনূর ম্যাডাম বলল।
Ñ ম্যাডাম, কথা একদম খাঁটি, তাহলে দেখি আমি একা একা সিলেট থেকে ঘুরে আসতে পারি কি না। শুক্রবার ছুটির সঙ্গে এবার ভাষা দিবসের ছুটি যুক্ত, মানে দু’দিন ছুটি এমনিতে, তার সাথে একটা ছুটি নিয়ে নিলেই!
বাহ তুমি একা একা গেলেই হলো, এত বড় ঘটনা খোশনূর রাগতভাবে বলল।
আব্বু আমরাও যাবো তুতুলের আবদার মাখা কন্ঠ।
Ñ এভাবে যাবার ব্যাপারে সবার মত পজেটিভ। কিন্তু হুট করে যাওয়াটা যেকোনো ভাবেই সম্ভব নয় তা সবাই জানে। খোশনূর যে স্কুলে চাকরি করে ছুটি মেলা ভার। আর রায়হান ব্যাংকার শুধু তা নয় ব্রাঞ্চ ম্যানেজার। মতিঝিল লোকাল ব্রাঞ্চের। বাণিজ্যিক পাড়ার ব্রাঞ্চ। ব্যস্ততার কোনো সংজ্ঞার সঙ্গে মিল নেই এখানে।
আর তুতুল পড়ে এইটে। সামনেই জেএসসি। পুতুল সিক্সে এবং আফিফ ফাইভে তারও পিইসি পরীক্ষা। মানে ওরা বাঁধা পরীক্ষার শিকলে।
যাবার ব্যাপারটা এভাবে যখন কর্তব্যের শিকলে আটকে যাচ্ছিল, তখন এলো শাহাবের পক্ষ খেকে নিষেধাজ্ঞা। শাহাব জানাল, প্রথমে তার চাচী খোশনূর এবং পরে চাচা রায়হানকে। আব্বু কইছুইন আম্মুরে এখন দেখতে সিলেট না আসতে। কারণ আম্মুর দুইটা অপারেশন বাকী। অপারেশন বাদে বোঝা যাইব তার শরীরের প্রকৃত অবস্থা। দোয়া করবেন বেশি বেশি আম্মুর জন্য সবাই। রাজনগরে আম্মুরে নেয়ার পর আপনারা আসবেন।
ব্যস, মিটে গেল ঝামেলা! এই কথার পর সিলেট যাবার চিন্তা বাতিল। কিন্তু যাওয়া বাতিল হলেও চাচীর শারীরিক অবস্থার খবরাখবর নেয়া চলল।
একদিন যায়। দু’দিন যায়। একেকটা ভাল খবর আসতে থাকে। অপারেশন সাকসেসফুল। হুঁশ আসা। কথা বলতে পারা। স্মৃতি তাজা থাকা। ইত্যাদি।

প্রায় মাস খানেক চাচীকে হসপিটালে কাটাতে হয়। পালাক্রমে আনছার চাচা শাহরিন-আইরিন হসপিটালে থাকে। বাড়িতে চাচীকে যাওয়ায় আনছার চাচা জানালেন যাওয়ার জন্য। কিন্তু যাওয়া আর তখন হয় নি।

দুই
গ্রীষ্মের ছুটিতে নয় যাবার প্রোগ্রাম হল পূজার ছুটিতে। এর ভেতর থাকল অনেক কথা। অনেক জল্পনা-কল্পনার জাল বোনা তুতুলদের। চাচী এখন অসুস্থ, কি হবে গিয়ে।
অন্য কোথাও এবার যাওয়া যাক। রাজশাহীতে নাকি বাদশাহী করেন রায়হানের এক চাচাতো ভাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-যেইসেই কথা নয় ‘বাদশাহী’ করারই কথা! সেই ফারুককে যোগাযোগ করে রাজশাহী বেড়ানোর ইচ্ছে জানাতেই খুশি মনে জানাল, চলে আসুন ভাইজান! বরেন্দ্র সভ্যতার ইতিহাসটা নিজ চোখে দেখে যান!
দোটানায় পরে গেল। তুতুল পুতুল রাজশাহী যেতে চায়। ট্রেন জার্নি ওদের ইচ্ছে। তাই ঘড়ির পেন্ডুলাসের মতো দুলতে থাকল রাজনগর না রাজশাহী? খোশানূর ভাঙল দ্বিধার পাহাড়, কি যে বল না তোমরা, ভাবীকে দেখার জন্য আমার মন সেই কবে থেকে ছুটে গেছে!
সিদ্ধান্ত হলো রাজনগর যাওয়া। সেভাবে জানানো হলো আনছার চাচাকে। শাহরিন আইরিন জেনে খুশিতে আটখানা। চাচী ও খুশি। চলল এ প্রান্ত ও প্রান্ত থেকে ফোনে কথা চলাচলি। ফারুককে জানানো হলো এবার নয় রাজশাহী।
কোথাও বেড়াতে যাবার মানে তুতুল পতুলের নোয়া মামা খবিরকে চাই। কিন্তু সমস্যা দেখা গেল গার্ডেন ম্যানেজার সাথী হতে পারছে না। জানিয়েছে তার কোম্পানির বিগ বস লন্ডন থেকে তাশরিফ আনবেন। একদম নড়চড় করা চলবে না খবিরের। বিগ বস ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট মেম্বারও। সরকারি প্রোটকলও তাকে মানতে হবে। তাই রিসেপসন্স দিতে সরকারি কর্মকর্তাদের যুক্ত করতে হচ্ছে।

মনটা দমে গেল খানিতটা তুতুলদের। নোয়া মামা ছাড়া?
হই হই বই বই
আনো দেখি দই খই
আমরা যাব রাজনগর
নেই কথার নড়চড়,
হই হই রই রই
আনো দেখি চিড়া দই!
ছড়া আওড়াচ্ছিল পুতুল। পুতুলের কবি প্রতিভা বেশ দেখা যাচ্ছে ইদানিং। তুতুল ক্ষেপানোর জন্য বলে, স্বভাব কবি গোবিন্দাশ। পুতুল তাতে ক্ষেপে যায়। এভাবে পুতুলকে ক্ষেপাচ্ছিল তুতুল। পুতুল কান্না করতে করতে আম্মুর কাছে গিয়ে নালিশ দিলো। আম্মু খোশানূর বললেন, তুমি শুধু শুধু ক্ষেপছ কেন? জান না গোবিন্দ চন্দ্র দাশ নামে একজন স্বভাব কবি ছিলেন? তিনি মুখে মুখে কবিতা রচনা করতে পারতেন। শোন তাহলে তার একটা কবিতাÑ
ধৈর্য ধর ধৈর্য ধর, বাঁধ বাঁধ বুক
শত দিকে শত দু:খ আসুক-আসুক!
এ সংসার কর্মশালা
জলন্ত কালান্ত জ্বালা,
পুড়িতে হইবে খাদ থাকে যতটুকু।
বাহ তোমার দেখছি ছেলেবেলার কবিতা এখনও মুখস্ত আছে!
পুতুল বলল নাচতে নাচতে।
Ñ হ্যাঁ মামণি, এমন সুন্দর কবিতা মনে থাকবে না। আগের কবিতায় সুন্দর উপদেশ থাকতো, জ্ঞানের কথা থাকতো তাই পড়লে মনে গেঁথে যেত। যেমন আরেকজন কবির কথা বলি। কবি জীবনানন্দ দাশের কথা শুনেছ?
Ñ হ্যাঁ, শুনেছি আম্মু, অনেক বড় কবি- বাংলার প্রকৃতি নিয়ে কবিতা লিখতেন।
Ñ সেই কবির মা-ও ছিলেন বড় কবি, কুসুম কুমারী দাশ তার একটা কবিতা এত লোকপ্রিয় হয়, যা আজও মানুষের মুখে মুখে-
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে?
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে;
মুখে হাসি বুকে বল তোজ ভরা মন,
‘মানুষ’ হইতে হবে- এই তার পণ।
পুতুলের মন খুশি হয়। ভুলে যায় তুতুল আপুর কথা। চলে আসে নিজের ঘরে। তুতুল আর পুতুলের ঘর একটাই। দু’বোন পাশাপাশি ছোট খাটে শোয়। পড়ার টেবিলও দু’জনের দু’টো। ঘরের উত্তর-দক্ষিণ কোণে।
গোছগাছ করতে হবে। আগামী কাল সকালের ট্রেনে এরা যাবে। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন তাদের বাসা থেকে অনেক দূর। তার মানে খুব ভোরেই রওনা দিতে হবে।
পুতুল তাই নিজের কাপড়-চোপড় একটা ব্যাগে গুছিয়ে রাখে। এসব ব্যাপারে লেট লতিফের গল্পটা মনে রাখে। একজন লোক নাকি সবকিছুতেই লেট করতো, ট্রেন ধরতো দৌড়ে ট্রেন ছাড়ার পর। তাই তার নাম হয়েছিল লেট লতিফ। সে তা হতে চায় না।

আম্মুর তাড়া খেয়ে তুতুলও ঘরে এসে নিজের কাপড়-চোপড় ব্যাগ ভর্তি করতে লাগে। একের কাপড় অন্যের সঙ্গে অদল বদল না হওয়ার জন্য এদের প্রত্যেকের আলাদা ব্যাগ। অনেক জামার কাপড় তুতুল-পুতুলের এক। মাপ বা ডিজাইনের যা পার্থক্য। পুতুলটা তিন বছরের ছোট হলেও কি হবে বাড়ন্ত বেশি বলে তুতুলের কঁাঁধ ছাড়িয়ে মাথা ছুঁই ছুঁই। জামার মাপ সহসা পার্থক্য করা কঠিন। তুতুলের জমা পুতুল পরে ফেলার ঘটনাও মাঝে মাঝে ঘটে। আর তা নিয়ে বাধে দু’বোনের তুমুল মারামারি। সে কারণেই আম্মু আজকাল এক ডিজাইনের কাপড় নিলেও রঙটা ভিন্ন অথবা কাটিং ভিন্ন দেন।
গোছগাছ কমপ্লিট করে পুতুল নিজ বিছানায় গুনগুন করে একটা ছড়া গান ভাজছিল-
দোল দোল দোলনি
রাঙা মাথার চিরুনি
বর আসবে এখুনি
নিয়ে যাবে তখুনি…
Ñ পুতুল, তোর গোছানো শেষ?
তুতুল তার লাল রঙের জার্নি ব্যাগটার চেইন এক টানে খুলে বলল, হ্যাঁ কখোন!
তুই কি এখুনি ঘুমাবি? তুতুলের আবার প্রশ্ন।
Ñ হ্যাঁ কাল ভোরে উঠতে হবে যে।
পুতুল চুপ করে যায়। তুতুলও দ্রুত গুছিয়ে ফেলে তার ব্যাগ।

তিন
ট্রেনে উঠে জানালার পাশের সিট দখল করা পুতুলের বরাবরের স্বভাব। ট্রেনে বসে বাইরের দৃশ্য দেখা উদ্দেশ্য। তাছাড়া চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে ঝড়ো বাতাস গায়ে লাগা পছন্দ করে সে। তুতুল এখানে ফোড়ন কাটে- প্রকৃত প্রেমিক।
পুতুলের মৃদু প্রতিবাদ- একটা আকার যোগ করতে হবে। তানাহলে গ্রামার ভুল হবে। এ জন্যইতো তুতুল আপু পরীক্ষায় বাংলায় কম নম্বর পায়।
‘কবে কম নম্বর পেলামরে! তুতুলের প্রতিবাদ।
আফিফ ব্যস্ত মোবাইলে গেম খেলা নিয়ে। পুতুল জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছিল। আকাশে পেঁজা তুলোর মত মেঘ ভেসে যাচ্ছে। টেলিফোন তারে বসা ফিঙে পাখিদের লেজ নাচালো। ছোট খালে ছোট ছেলে-মেয়ের মাছ মারার দৃশ্য। রেল লাইনের পাড় ঘেসে গরুর ঘাস খাওয়ার এসব দেখে পুতুলের মন তরতাজা হয়ে উঠে।
‘পুতুল, এ্যাই পুতুল, একটা কবিতা রচনা কর না। শুনব। তুতুল বলল।
‘সত্যি, তুমি আমার কবিতা শুনতে চাও?’ পুতুল বাইরের দৃশ্যে চোখ রেখে বলল। [হুম তাহলে একটা ছড়া শোনাই-
ঝিক ঝিক রেল গাড়ি
আমরা যাব মামা বাড়ি
মামা বাড়ি মামী নেই
আমরা সবে খাই দাই।
[‘বাহ্ খুউব সুন্দর হয়েছে ছড়া পুতুল মনি! তবে ছড়ায় একটু ভুল আছে। আমরা মামা বাড়ি যাচ্ছি না। চাচা বাড়ি যাচ্ছি।’
তুতুল বলল।
হি হি হি হি…..
পুতুল হাসে।
হিস্ হিস্ হিস্ হিস্ ….
[দুপুর পৌনে দু’টোয় ট্রেন কুলাউড়া স্টেশনে ইন করল। স্টেশন আদি আমলের। ব্রিটিশ আমলের মনে হয়। তবে বড়সড়। জংশন বটে।
[শুরু হয়ে যায় ছুটোছুটি মানুষের। কেউ নামছে। কেউ উঠতে চেষ্টা করছে। যাত্রীর সংখ্যাও বেশ।
তুতুলরা একে একে নেমে প্লাটফর্মে এক স্থানে দাঁড়ায়।
[‘চাচা চাচা আমি আইছি আমি আইছি-’
নীল রঙের শার্ট পরা হাত দিয়ে ইশারা করছিল শাহাব। দ্রুত হেটেঁ শাহাব ভাইয়া হাজির হল।
‘চলেন গাড়ি বাইরে।’ শাহাব ভাইয়ার সাথে সুজনও।
সুজন বড় বড় দু’টো সুটকেস হাতে তুলে নেয়। শাহাব নেয় ছোট দু’টো জার্নি ব্যাগ। স্টেশন থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে। কুলাউড়া থেকে রাজনগর মুন্সিবাজার আনছার চাচাদের বাড়ির দূরত্ব অন্তত দশ কিলো। আবার শ্রীমঙ্গল থেকে দূরত্বটা আরো বেশি। তাই এখানে আসার সহজ উপায় মাইক্রোবাস অথবা কার। এর আগে যতবার রায়হানরা এসেছে মাইক্রোতেই। এবার তুতুল পুতুলরা বায়না ধরল ট্রেনে চড়বে। তাই এই বাড়তি ঝামেলা পোহানো।
‘তোমার আব্বা ভাল আছেন? ভাবীর কি অবস্থা?’
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দু’এক মিনিট চলতেই রায়হান জানতে চায় শাহাবের কাছে।
পাজেরো নিয়ে এসেছে শাহাব। ড্রাইভারের পাশের সেিট সুজন ও শাহাব চাপাচাপি করে বসেছে।
‘জ্বী চাচা আব্বু ভালা, আম্মু হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন।’
চাপাচাপির জন্য শঅহাব পেছনে ফিরে জবাব দিতে পারল না। উসখুস করে।
‘আহ্হ এমন ফূর্তিবাজ কাজের মানুষটার হুইল চেয়ারে দিন কাটে।’
‘সবই আল্লাহর ইচ্ছা, তবু জীবনটা রক্ষা পেয়েছে-’ খোশনূর যোগ করে রায়হানের কথার সঙ্গে।
পি-প্ পি-প্ পি-প …
গাড়ি এসে থামলো খান মঞ্জিলের গেইটে। শাদা পাথরের ওপর কালো অক্ষরে লেখা- খান মঞ্জিল, মুন্সিবাজার, রাজনগর, মৌলভীবাজার।
বিশাল গেইট। বন্ধ।
পি-প্ পি-প্ পি-প …
গেইট খুলে যিনি সামনে দাঁড়ালেন তিনি আর কেউ নন আনছার চাচা। সুজনও ততক্ষনে গাড়ি থেকে নেমে গেইট খুলতে এগোয়।
‘কি ব্যাপার আব্বু তুমি গেইট খোলতে আইছ বাড়িত আর কোনগু নায়নি?’
শাহাব কিছুটা বিচলিত হয়ে বলল।কারন আনছার চাচার শরীর তত সুস্থ না। হার্ট অপারেশন করা মানুষ।
‘মনে করলাম আমি পহেলা বরন করতাম আমার মামুর ঘরর ভাই-ভাবী ভাতিজী-ভাতিজা তারারে-’
আনছার চাচার মুখে হাসি।
সুজন গেইট বন্ধ করার জন্য থেকে গেল। আনছার চাচা শাহাবের সঙ্গে গাড়িতে উঠলেন।
মূল বাড়ি বেশ দূর। গাড়িতে মিনিটের পথ। পুরো বাড়ি এগারো কিয়ারে জমির উপর। কিয়ার সিলেটের আঞ্চলিক মাপ। বিঘার চেয়ে বড়। সেই হিসাবে প্রায় চৌদ্দ বিঘার জমির ওপর এই বাড়ি। জমিদার বাড়ি বলা যায়। উচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরাও পুরো সীমানা। দু’টো পুকুর ওই সীমানায়। একটা বর্হিভাগে শান বাঁধানো অপরটা অন্দর বাড়িতে, মহিলাদের জন্য।
পি-প্ পি-প্ পি-প্ …
গাড়ি এসে থামল বাড়ির উঠোনের মাঝখানে। সাধারণত কোন গাড়ি এ পর্যন্ত প্রবেশাধিকার পায় না। গাড়ির বারান্দা আছে বর্হিভাগে, সেখানে থামে। কিন্তু সম্মানিত মেহমান এলে উঠোন পর্যন্ত এসে গাড়ি থামে। ড্রাইবার আকবরের জানা।
গাড়ি থামতেই দৌড়ে আসে আইরিন। এক চাচা ও দুই চাচী। চাচাতো ভাই মিল্লাত।
বিশাল বাড়ি, বাসিন্দা খুব কম। চারদিকে বিশাল বিশাল দেবদারু, সুপারি, কড়ই গাছের ছায়ায় পুরো বাড়িটা শীতল হয়ে আছে। উঠোনের দু’পাশে ফুলের গাছের সমাহার। নানা জাতের ফুল ফুটে আছে।
গাড়ি থেকে নেমে চলল সালাম আাদান প্রদানের মহড়া। বড়দের ছোটরা করতে থাকে সালাম।
‘কোথায় মানুষ জন কোথায় আনছার ভাই?’
রায়হান চিৎকার করে বলল।
‘মানুষ যিনি বাড়ি মাতাইয়া রাখতা তাইনত লন্ডনো আর বড়জনতো কবরো- আল্লা নিছুইন গি-’
আনছার চাচারা চার ভাই এক বোন। বোন থাকে শুশুর বাড়ি। এক ভাই লন্ডন আর একজন মারা গেছেন। এই বাড়িতে তিনটি পরিবার থাকে। একমাত্র আনছার ভাইর পরিবার বড়। পাঁচজন। এ বিশাল বাড়িটা এরাই আলো ছড়াচ্ছে। বড়জনের ছেলেরা থাকে অস্ট্রেলিয়া। ছোট দ’জনের একজন নি:সন্তান। আরেক জনের একটি ছেলে মিল্লাত। এ ছাড়া কাজের লোক আছে গোটা পাঁচেক।

চার
[হুইল চেয়ারে বসা মালা ভাবীকে দেখে খোশানূর হঠাৎ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। তুতুল পুতুল ও চাচীকে জড়িয়ে ধরে। একটা হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়।
[‘ চাচী, আপনি হাটতে পারেন না? পুতুল জিজ্ঞেস করে।
[‘না, মাইগো- কোমড়ে ব্যথা, বুকো ব্যথা, হাঁটতে খুব কষ্টগো মাই- তোমরা আইছ আমি তোমরারে রানদিয়া খাওয়াইতে পারতাম না- এইখান আমার বেশি কষ্ট- শরীরর কষ্ট থাকি-’
[মালা চাচীর চোখে পানি দেখে সবার চোখেই পানি এসে যায় একে একে।
[‘ভাবী, আল্লাহর রহমতে আপনে ভালা হইয়া উঠবেন- আমরা আবার আপনারে নিয়া বেড়াইতে যাইমু-’
রায়হান বলল।
‘দোয়া করিও রায়হান, আল্লাহ যেন তানরে পুরা সুস্থ করি দেয়। এখনও আমার পোয়া-পুরীর বিয়া-শাদী অইছে না- তাইন সুস্থ না অইলে-’
আনছার চাচা ভেঙ্গে পড়লেন। তার কন্ঠ বন্দ হয়ে গেল। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন চাচা। চাচার কান্নায় শাহরিন-আইরিন যোগ দিলো। আবার মিনিট দু’য়েক চলল কান্নার রোল।
[দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষে গল্পের আসর বসল। এ বাড়িতে রুমের কোন অভাব নেই। শাহরিন বলল, আমার ঘরে হবে আড্ডা। আইরিন বলল তার ঘর সবচেয়ে গোছানো পরিপাটি তার ঘরে হোক আড্ডা। সবশেষে ঠিক হল, দু’জনের মাঝে যে ঘরটা আছে, ওই ঘরে কেউ থাকে না, সেই ঘরে হবে ওদের আড্ডা।
বড় একটা কালো রঙের পালঙ্ক ঘরে। বেশ কারুকাজ করা। দেখেই বোঝা যায় অন্তত একশ’ বছর আগের।
‘এই পালঙ্কে আমাদের দাদী, রায়হান চাচার ছোট ফুপু থাকতেন।’ শাহরিন বলল।
পালঙ্কের মাথার দিকে একটা জানালা। বন্ধ ছিল। শাহরিন জানালা খুলে দিলো। দক্ষিন দিকের জানালা। এখানে একটা সব্জির বাগান। চোখের সামনে দৃশ্যমান হল।
‘দাদী এই সব্জি বাগানটা করাইছিলেন।
শাহরিন বলল।
‘হইছে আপা, দাদীর কিচ্ছা পড়ে করবা, আগে আম্মুরটা কও।’
আইরিন ঝাঁজ নিয়ে বলল।
‘এই সব্জি বাগানেই আম্মুকে ফেলে রাখে।’ ধরা গলায় শাহরিন বলল।
‘এই গল্পটা শোনাও শাহরিন আপু, চাচীকে ছাদ থেকে নীচে ফেলার-’
তুতুল বলল।
[‘বলছি পুতুল- তখন দুপুর একটা বাজে নাই জোহরের আজান হয় নাই। আমাদের বাড়ির সামনে রাস্তা, ওই রাস্তার অপর পাড়ে জামে মসজিদটা, আমাদের চাচাদের করা- ওই মসজিদের মিনার থেকে আজান দিলে আমরা শুনতে পারি। তখনও আজান হয় নাই। আমাদের কাজের মেয়েটা কি একটা কেিজ সব্জি বাগানে যায়। দেখে আম্মু বেঁহুশ পড়ে। নাক দিয়ে রক্ত পড়তেছে। ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে দৌড়ে এসে আমাকে খবর দেয়। বাকীটা তোমরা জান। কি আর বলল। আমাদের কিসমৎ খারাপ!
[‘কিন্তু কে বা কারা ফেলেছে জানা গেছে?’
তুতুল জিজ্ঞেস করে।
[‘জানা গেছে। আম্মু বলতে পারেন নাই। আম্মু শুধু দমকা হাওয়ার কথা বলেন। আর বলেন তিনি বাধা দিতে পারেন নাই। শক্তিশালী কিছু একটা তাকে মুহুর্তে তুলে ফেলে দেয়। এরপর হুজুরকে ডাকা হয়। তিনি আমাদের অন্দর মহলের বাইরে একটা বেঠকখানা আছে, ব্যবহার খুব কম হয়। হুজুর ওই ঘরে তিন দিন ছিলেন। তিনি আব্বুকে সব খুলে জানা।
শাহরিন বলল।
[‘কি জানা গেছে শাহরিন আপু?’
পুতুলের প্রশ্ন।
[‘হুজুর বলেছেন- আমাদের এই বাড়িটা বানাবার আগ থেকে ওরা এখানে বসবাস করে আসছিল-’
[‘ওরা মানে কারা আপু? তুতুলের প্রশ্ন
[‘ খারাপ আত্মা, পেরত। যেসব মানুষ আত্মহত্যা করে, ফাঁসীতে ঝুলায়ে মারে, নানান তাপঘাতে মারা যায়, সেসব আত্মা ফিরে যেতে পারে না আপন আবাস স্থলে, তারাই পৃথিবীতে বিচরণ করে এবং মানুষের ক্ষতি করে। হুজুর বলেছেন এ রকম দুই পাপিষ্ট আত্মা আমাদের ছাদে বাস করত। ওদের নাকি বহুদিন ধরে কুমতলব এ বাড়ির মানুষদের ক্ষতি করার। সেদিন আম্মুকে ছাদে একা পেয়ে তাদের পুরানো কুমতলব কার্যকরি করেছে।’
শাহরিন অনেক কথা বলে হাঁপিয়ে উঠে।
[‘তাহলে ছাদে যাওয়া নিষেধ? আমরা রাতে ছাদে বসে আগে গল্প করতাম, তা করা যাবে না?’
পুতুল বলল।
[‘যাবে, যাবে, হুজুর বলেছেন, ওই দুই পাপিষ্ট আত্মাকে শিকল দিয়ে বেন্ধে একটা মাটির কলসিতে ভরে বিলে ফেলে দিয়েছেন, আর ওদের উপদ্রুপ নেই।’
[‘সত্যি, কিন্তু হুজুর এতোসব করলেন কিভাবে- কেউ কি দেখেছে? হি-হি-হি-হি-’
আফিফ হাসতে থাকে প্রচুর।
হি-হি–হি—হি—হি—হি—হি—হি—
সবাই মিলিতভাবে হাসতে থাকে।
‘কিরে পুঁচকে পুঁচকিরা এতো হাসাহাসি কেন?
শাহাব ভাইয়ার প্রবেশ।
‘এসো হাফ ডাক্তার ভাইয়া। আইরিন বলল।
‘হাফ ডাক্তার না, আম্মুর বিপদে কে ছিল, তোমরা না আমি? আর আমি ফাইনাল দিয়া আইছি। পরীক্ষা ভালা হইছে। পাস করুম ইনশাল্লাহ !’ শাহাব বলল।
‘ঠিক আছে ভাইয়া ফুল ডাক্তার- এবার বল আমাদের বেড়াতে নিয়া যাইবা কোথায় এবং কবে? তুতুল বলল।
‘এইবার তোমাদের নিয়া যাইব পাথরের কান্না দেখাইতে-’ শাহাব একটু রহস্য করল।
‘পাথরের কান্না মানতে ঝরনা দেখাইতে নিবা আমাদের, ঝরনা তো কত দেখছি ভাইয়া-নতুন কোন স্পটে নিয়া যাও।’ শাহরিন বলল।
‘বাংলাদেশের কাশ্মীরে নিয়া যাইব তোমাদের- একদম নতুন স্পট- গেলে বুঝতে পারবা কেন বাঙলার কাশ্মীর ভলা হয়।
‘বা-ং-লা-দে-শে-র কাশ্মীর! ওইটা আবার কোথায়? আইরিন বিস্ময় প্রকাশ করে।
‘খুলে বল না ভাইয়া, আমরা খুব এক্সাটাইটেড ফীল করছি-’
পুতুল বলল।
‘মাথা খাটা, মাথাটাকে অলস বানিয়ে ফেলছিস মোবাইলে চোখ রেখে রেখে- ভেবে দেখ আমি কোন্ স্পটের কথা বলছি। চাচার সঙ্গে আমি একবার গেছিলাম। তখন আমি পড়ি ক্লাস নাইনে। চলি, তোরা ভেবে দেখ!’
বলে শাহাব ভাইয়া উঠে গেল।

পাঁচ
[মালা ভাবীর ঘরেও একটা আড্ডা জমে উঠে। এটা বড়দের। রায়হান, খোশানূর, আনছার ভাই, আরজু ভাবীসহ এক বড়সড় আড্ডা চলছিল। বিষয় ওই মালাভাবীর ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার দুর্ঘটনা নিয়ে।
[ফরিদা বেতের ট্রেতে টিপয়তে চা-কপি এবং একবাটি চিড়া ভাজা রেখে গেছে একটু আগে। [মালা ভাবী বিছানায় শোওয়া। বেশিক্ষন বসে থাকতে অসুবিধা। খোশানূর ও আরজু ভাবী বিছানায় বসা। রায়হান ও আনছার ভাই চেয়ারে বসা। তাদের সামনে একটা টি-টেবিল ফরিদা ট্রেতে ওসব রেখে চম্পট। তাই খাট থেকে নেমে আরজু ভাবী চা পরিবেশন করতে লেগে যায়। চিনি ছিল সুগার পটে। চা কাপে চা ঢেলে সুগার পট এগিয়ে দেয়। যাতে নিজের নিজের চিনি খাওয়ার পরিমান মত নিয়ে নিতে পারে। যথারীতি চিড়াভাজা ছোট্ট বাটিতে বাটিতে দিয়ে সবার হাতে হাতে ধরিয়ে দেয় আরজু।
[চা পান করতে করতে আড্ডা আরো জমে উঠল। মালাভাবীর ঘটনা আর শোনা শেষ হল না। ঝড়ের গতিতে শাহাব আর আফিফ এসে হাজির।
‘চাচা-চাচী, আপনারা এক জায়গায় বেড়াইতে যাইবানি?’
শাহাবের এসেই প্রশ্ন।
[রায়হান চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে ফ্রিজ। শাহাবের দিকে তাকায়। কি বলবে বুঝে উঠতে পারছিল না।
মালাভাবী এখনও পুরো সুস্থ না। উনি যেতে পারবেন না তাদের সঙ্গে। এমন হাসি-খুশি চমৎকার মানুষটা ছাড়া কিভাবে তারা বেড়াতে যাবার কথা ভাববে?
[‘বাবা শাহাব, তুতুল-পুতুল-শাহরিন-আইরিন-আফিফ তোমরা মিলে ঠিক কর না! খোশানূর বলল।
[‘আমি তাহলে বলি, নতুন একটা স্পট আবিষ্কার হইছে, আগে রাস্তা খুব খারাপ আছিল, এখনও সামান্য রাস্তা খারাপ, কিন্তু তেমন খারাপ না-আর বাকী রাস্তা খুব ভাল-বর্তমানে ওই স্পটের নাম দেয়া গেছে, বাঙলার কাশ্মীর।’
[‘কি কাশ্মীর! খোশানূর বিস্ময় প্রকাশ করে।
[‘জ্বি চাচী, কাশ্মীরে আপনি গেলে যেরকম সৌন্দর্য দেখতে পাবেন, এইখানে একই সৌন্দর্য পাবেন-’
[‘অইছেবা কইলাও সাদা পাথ্বর যাইতাম-যাও ব্যবস্থা কর- আমরা রাজী।’
আনছার চাচা হাসতে হাসতে বললেন।
শাহাব আফিফ যেভাবে ঝড়ের গতিতে এসেছিল সেভাবে চলে গেল।
[‘এইসব ব্যাপারে শাহাবের ভালা অভিজ্ঞতা আছে। তার লগে সব কিসিমের মানুষের সম্পর্ক- সে ঠিক ব্যবস্থা করবে।
আনছার ভাই বলল।
[‘তাহলে কি আমরা আগামীকাল যাচ্ছি কোথাও?’ খোশানূর প্রশ্ন করল রায়হানের দিকে তাকিয়ে।
শেষ পর্যন্ত শাহাবের ইচ্ছার জয় হল। ঠিক হল ‘বাঙলার কাশ্মীর’ নামে খ্যাতি পাওয়া কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ভোলাগঞ্জ যাওয়া হবে। সেভাবেই একটা মাইক্রোবাস ঠিক করল শাহাব। তার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর রেন্ট-এ কার সার্ভিসের গাড়ি। ভাড়া করা গাড়ি তাদের নিয়ে যাবে এবং ফেরৎ আনবে।
রাতে খাবারের টেবিলে শাহাবের পক্ষ থেকে ঘোষণা এলো। সকাল সাড়ে দশটায় গাড়ি আসবে। সেভাবে রেডি থাকতে সবাই। অন্তত এগারোটার মধ্যে র্স্টাট দিতে হবে। কারণ ভোলাগঞ্জ যেতে দু’ঘন্টার মত সময় লাগবে তাদের।
‘শাহাব ভাইয়া, আমরা দুপুরে খাব কি?’ পুতুলের প্রশ্ন ছিল।
‘দুপুরের খাবার আমাদের সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। এ ব্যাপারে চাচীর সঙ্গে আলাপ হইছে। তিনি মোরগ পোলাও রাতে রান্না করে রাখবেন। আমরা সেই রান্না করা খাবার খাব দুপুরে।
শাহাব বলল।
‘ কোথায় খাব আমরা ভাইয়া?’ তুতুল জানতে চায়।
‘সেটা গেলেই দেখতে পাবে। সবকিছু আগ থাকি বলা যাবে না বুঝলে?

সকালে উঠে সাজ সাজ রব পড়ে গেল বাড়িতে। হাঁক ডাকে মুখর পরিবেশ। মেয়েদের সাজুগুজু করতে সময় লাগে।
শাহাব ভাই বার দুয়েক এসে তার ছোটবোন শাহরিন আইরিনকে তাগাদা দিয়ে গেছে। মেহমান হিসেবে তুতুল পুতুলকে কিছু না বললেও ইঙ্গিতে বুঝাতে চেয়েছে দেরি করা চলবে না ওদের।

গাড়ি এসেছে এই গাড়ি এসে গেছে…
চিৎকার দিতে দিতে আফিফের প্রবেশ।
ইস গুলতানি মারছো পুতুলের জবাব।
পুতুল মাথার চুলে একটা প্রজাপতি ক্লিপ আঁটতে ছিল নিমগ্ন। সবার সাজুগুজু শেষ। পুতুল সবাইকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে পেছনে পড়ে গেছে। তবে তার চুলটা যা বাকি আর সব কমপ্লিট।
গাড়ির শব্দ শোনা গেল, পুতুল এবার নিশ্চিত হলো গাড়ি আশার খবর সত্যি।
শাহাব ভাইয়া, আমরা এখন গাড়িতে উঠবো? ড্রইং রুমে এসে আফিফ জিজ্ঞেস করে।
না, এখন না। গাড়ির গ্যাস ভরতে যাবে গ্যাস ভরে আসার পর উঠবো শাহাব বলল।
ড্রাইভারের সাথে এ বিষয়ে নিয়ে একটু আগেই রাগ করেছে শাহাব। কেন গ্যাস ভরে একেবারে আসলো না। ড্রাইভার বলেছে, গ্যাস ভরার জন্য টাকা তাকে দেয়া হয়নি। তাই সোজা এখানে চলে এসেছে রেন্ট-এ-কার মানেই শহর ভাড়া নেয়া লোকের অগ্রিম টাকা দিয়ে গাড়ির গ্যাস বা তেল কিনবে।
বেশ তার গাড়ি ফিরে আসতে বেশি দেরি লাগেনি। তাদের বাড়ি থেকে মুন্সীবাজার ফিলিং স্টেশন দুই মিনিটের পথ। গাড়ি এসে দাঁড়াতেই তোড়জোড় পড়ে যায় ওঠার। ছোটরা আগে উঠবে তারপর গাড়ির সামনের দিকে বড়রা। এদিকে, মালা চাচিকে রেখে বেড়াতে যাওয়া সবার মনে খচখচ করতে থাকে পুতুল, পুতুল, শাহরিন, আইরিন সবাই এসে মা চাচিকে সালাম জানায় রায়হান, আরজুও এসে বিদায় নেয় মালা ভাবীর কাছ থেকে সবশেষে আনসার চাচা ও শাহাব।
এ বাড়ির নিয়ম কেউ বাইরে গেলে ঘরের লোকজন দের কাছ থেকে বিদায় নেয়। এভাবে একের পর এক জন করে এসে বিদায় নেয়ার এ আওয়াজ মালা চাচিকে বিমর্ষ করে তোলে। নিজের অসুস্থতার কষ্ট বেশি করে অনুভব করতে থাকে। আজ সেও ওদের সঙ্গে যাওয়ার কথা ছিল একে একে গাড়িতে সবাই উঠেছে দুপুরের খাবার মোরগ-পোলাওর সাসপেন, প্লাস্টিকের গ্লাস, বোতল, পানিও গাড়ির পেছনে তোলা হয়েছে। শাহাব তদারকি করছে। আনসার চাচাও লক্ষ্য রাখছেন কোনো প্রয়োজনীয় জিনিস হয়ে গেল কিনা। শাহাবের কাছে একটা ভিডিও ক্যামেরা। তা দিয়ে একটু পরপর ভিডিও করছে। গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে, কেউবা বাগানের সামনে নানা স্থানে পোজ দিয়ে যাচ্ছিল আর শাহাব তা ভিডিও করে চলেছে পরম যতেœ।
সবাই গাড়ি উঠছনি? ড্রাইভার এর পাশের সিটে বসে আনসার চাচার কণ্ঠ।
জিয়ো আব্বু উইঠছন হগলে, গাড়ি স্টার্ট দেউকা- জবাবে শাহাব বলল।
শাহাব বসেছে মাইক্রোর সর্বশেষ সিটে। আব্বুকে প্রাধান্য দিতে। যদিও নিয়মমতো তার ড্রাইভারের পাশে বসা উচিত ছিল। কারণ, সে ড্রাইভারকে তদারকি করতে পারতো। অবশ্য তার আব্বুও এ রাস্তা ভালো চিনে নিতে পারবেন। আব্বুদের যখন এখানে ব্যবসায় চালু ছিল তখন ঘনঘন এখানে আসতে হতো। গাড়ি স্টার্ট দাওবা ড্রাইভার! আনসার চাচা বললেন।

গাড়ি স্টার্ট করছে এমন সময় কোত্থেকে খোকন দূর থেকে গাড়ির সাথে দৌড়ানো শুরু করেছে। আনসার চাচার নির্দেশে গাড়ি থামানো হলো। খোকন আনসার চাচার ছোট ভাইয আখলাকের ছেলে। আখলাক থাকে দুবাই। তার স্ত্রী অসুস্থ। বিছানায় পড়ে থাকে বছরের পর অধিকাংশদিন। গাড়ির জানালার কাছে এসে খোকন আবদার জানায়- চাচাজি আমিও যাইতাম। সে খুব সকালে মাদ্রাসায় গিয়েছিল হিফজ করতে। তাই জানতে পারেনি বেড়ানোর এই প্রোগ্রামের কথা। এখন! কি করবে ভোরে উঠতে পারে না আনসার চাচা। ওর মাকে না জানাইয়া নেওয়া যাবে না।

এই শাহরিন কিতা করতে যা তোর চাচীরে জানাইয়া আয়গি খোকন আমরার লগে গেল।
আনসার চাচা বলার সাথে সাথে ড্রাইভার গাড়ির দরজা টান দিয়ে খোলে। সিট ভেঙে পথ তৈরি করে শাহরিন যাতে ভেরত থেকে বের পারে। শাহরিন বের হয়ে আসে। খোকন ততক্ষণে উঠে পরে গাড়িতে। একটু পরে শাহরিন এসে জানায় চাচিকে সে বলেছে। সবাই বিরক্তি প্রকাশ করে খোকনের কর্মকা-ে। কিন্তু মুখে প্রকাশ করে না।
গাড়িতে ছুটছে পাহাড়ের পথে। দু’দারে টিল্লা। চা বাগান। এঁকেবেঁকে চলে গেছে পথ। রাস্তাও প্রশস্ত নয়। ড্রাইভার রানা বেশ দক্ষ বুঝা যাচ্ছে চালানোর ভঙ্গিমায়। সাঁই সাঁই করে বাতাস কেটে গাড়ি ছুটছে। এভাবে ছুটতে ছুটতে কখন যে সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্র হুমায়ুন রশীদ চত্বরে এসে গেল টের পাওয়া যায়নি। গাড়ি থামল একটা হোটেলের সামনে। কেউ যদি প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে চায় সে কারণে।
গাড়ি থেকে বের হলো। কেউ কেউ হোটেলের ভেতরে গেল প্রয়োজনে। পনোরো মিনিটের বিরতি।
শাহাব ভাইয়া, চিপস্ খাওয়াও না! পুতুল বলল।
আমিও তাই-ই ভাবছিলাম শাহাব বলল।
রাস্তা পেরিয়ে গেল শাহাব চিপস্ কিনতে। এ পাশের দোকানে টিপস্ ছিল না। বড় পলিথিন ব্যাগে জনপ্রতি একটা হিসাবে কয়েক প্যাকেট চিপস্ কিনলো সে। কয়েক প্যাকে বিস্কুট, চানাচুরও নিলো। ‘এই নাও তোমাদের চিপস্’ বলে এগিয়ে দিল শাহরিনের দিকে। শাহরিন এদের মধ্যে বড়।
গাড়ি আবার চলতে শুরু করেছে আম্বরখানা চৌরাস্তায় এসে মালুটিকর বিমানবন্দরের রাস্তা ধরল। এখান থেকে নাকি ভোলাগঞ্জ তেত্রিশ কিলো দূরত্ব। সময় লাগতে পারে দেড় ঘন্টা। তার মানে ওদের পৌঁছতে দুটো বাজবে। রাস্তায় এদিকটা ভালো। তবে কোম্পানীগঞ্জের খানিকটা পথ নাকি ভালো না। ভালো না মানে নতুনভাবে প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। কোম্পানীগঞ্জ সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চলের কাছে। এখানে সীমান্ত বাজার বসবে কিছুদিন পর। সেজন্য রাস্তা তৈরি উন্নত করা হচ্ছে।

দেখতে দেখতে গাড়ি চলে এলো ভোলাগঞ্জ। বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘সাদা পাথর’ এই তাহলে সাদা পাথর? তুতুল পুতুল ভাবে।
গাড়ি যেখানে এসে থামল আশপাশে অনেক গাড়ি ট্যুরিস্ট এসেছে। সংখ্যায় কম না। অন্তত কয়েক ’শ। মাথার ওপর ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুর। ঝড়ো বাতাস। দৃষ্টি আটকে যায় মেঘালয় পাহাড়ের বুকে। সবুজ আর সবুজ। কুয়াশায় অস্পস্ট পাহাড়।
শাহাব সবাইকে গাড়ির পাশে রেখে গেল নৌকা ভাড়া করতে। একটু পর এসে বলল, চলেন চলেন নৌকা ভাড়া করা হইছে।

শাহাবকে সবাই অনুসরণ করতে থাকে। কিছুটা পথ হাঁটতেই ঢালু নদীর পাড়। বেশ ঢালু। সাবধানের পা না ফেললে গড়িয়ে ‘পা পিছলে আলুর দম’ হবার জোগাড় হবে। সাবধান! সাবধান! আনসার সবাইকে বললেন। লম্বা টাইপের নৌকা। নৌকার মাঝামাঝি খানিকটা ছই আছে। দুজন মাঝি। একজন বাচ্চা বয়সের আরেকজন মধ্যবয়সী। তার হাতে মূল বৈঠা।
নৌকায় একে একে উঠে বসে। নৌকার মাঝে ৩-৪ সারি কাঠের পাটাতন পাতা বসার জন্য। ছইয়ের ভেতর বসল খোশনূর চাচী, আরজু চাচী, আনসার চাচা ও শাহাব ভাইয়া। আর ছইয়ের বাইরে নৌকার দুই ধারে বসলো আইরিন তুতুল পুতুল আফিফ আর খোকন।
এটা ধলাই নদ। মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে এসেছে নাচতে নাচতে। ঘুঙুর পায়ে। কলকল ছলছল গান গেয়ে। সেই সাথে নিয়ে এসেছে আমাদের জন্য অসংখ্য পাথর। যেদিকে চোখ যায় সাদা পাথরের সারি। চোখ জুড়িয়ে যায়। সৌন্দর্য কাকে বলে। কাকের চোখের মত স্বচ্ছ পানি। হিম। প্রচ- হিম। হাত দিলে শরীর শীতল হয়ে আসে।
কি তুতুল পুতুল বাংলাদেশের কাশ্মীর না? শাহাবের প্রশ্ন।
কাশ্মীর তো দেখিনি, তবে, ভীষণ সুন্দর, ভীষণ ভীষণ! পুতুল বলল। তাহলে পুতুলমণি একটা কবিতা হয়ে যাক! তুতুল বলল।
কবিতা না গান হোক আইরিন বলল।
হ্যাঁ, আপু একটা গান ধরো না, তুতুল বলল।
হ্যাঁ আপু একটা গান গাও, পুতুল বলল। তাহলে আমার সঙ্গে সাথ দিতে অইব তোমাদেরও, শাহরিন বলল।
আমি দিমুনে আপু, আইরিন বলল।
শাহরিনের গান চলছে।

গান শেষ হতে হতে নৌকা ভিড়ল আরেক পাথরের রাজ্যে। এটাকে জিরো পয়েন্ট বলে। বিস্তীর্ণ পাথরের সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যেতে হবে ধলাই নদীর আরেক প্রান্তে। আমাদের সবার গান কেমন লাগলো ভাইয়া? পুতুল জানতে চাইলো।
ভীষণ সুন্দর লেগেছে তবে তোমরা দুজন ঠোঁট মিলিয়েছ কণ্ঠ মেলাওনি। ফাঁকি দিয়েছো, শাহাব হাসতে হাসতে বলল।
গানটা আমাদের জানা ছিল না, শাহরিন আপু ভালো পারেন।
পাহাড়ের সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সে ধলাই নদের আরেক প্রান্তে সবাই চলে এলো। এখানে অনেক ট্যুরিস্ট ভিড় করেছে। নেমে পড়েছে ধলাই নদে। পানি অপেক্ষাকৃত কম। বাতাস ভরা টায়ার পাওয়া যায়। পাওয়া যায় লাইফ স্বচ্ছ পানির নিচে পাথরগুলো দেখা যাচ্ছে।
কেউ নামছে কেউ পাথরের ওপর বসে ভাবছে। ভাবার লোকজনের সংখ্যায় বেশি। শাহরিন আইরিন সবার আগে নেমে পড়ে। ডাকতে থাকে তুতুল পুতুলকে। নিরাপত্তার জন্য ভাড়া করে টায়ার। অনেক ভেবেচিন্তে নামে তুতুল পুতুলরা। শাহাব চোখের পলকে হাওয়া।
একটু পর ভাইয়া হেলেদুলে হেঁটে হাজির। পুরো গা ভিজে একসার।
বুঝলে তুতুল পুতুল সাদা পাথরের কান্না একেই বলে। দেখছ না কিভাবে কান্নাগুলো কল্ কল্ ঝরে পড়ছে অনবরত?