লোভী

আজম সিদ্দিক রুমি

0
61

এক রাজার একটি বাগান ছিল। বাগানে অনেক পাখি ছিল। শালিক পাখি বাগানের গুরুত্বপূর্ণ একজন। যেকোনো মিটিং হোক, শালিক পাখির তলব। আসতে হয়, নইলে রাজাপাখি বড় কষ্ট পান। সেই কষ্ট লাঘবের জন্য হলেও রাজদরবারে ঢুঁ মারতে হয়। শালিক পাখি ভালো মনের, বড় উদার। কেউ আঘাত পেলে, বিপদে পড়লে উদ্ধার করার জন্য ছুটে যায়। যেকোনো সময় যেকোনো প্রয়োজনে শালিক পাখি হাজির। এ জন্য শালিক পাখি সবার দৃষ্টি কাড়ে। রাজাপাখি শালিক পাখিকে উত্তম ব্যবহারের জন্য হিরের আংটি উপহার দিয়েছেন। বিশ্বস্ত হওয়ায় প্রাইভেট সহ-সেক্রেটারি নিযুক্ত করেছেন। এ থেকে সবাই চায়, শালিক পাখির মতো হতে।
সময়ের পরিক্রমায় রাজাপাখির খুব কাছের একজন হয়ে যায় শালিক পাখি। শালিক পাখির এখন অনেক দায়দায়িত্ব। নিয়ম করে অফিস আসতে হয়, যেতে হয়।
এর মাঝেই কাক মহোদয়ের আগমন। দশ দিন ধরে তিনি রেস্টে ছিলেন। অনেক কাজের চাপ। ছুটি না নিয়ে চলে গেছেন। অসুখও ছিল বটে। তাই রাজাপাখি কাক মহোদয়কে কিছু বলেননি। সব ভুল ক্ষমা করে দিয়েছেন। রাজাপাখির মনটাও খুব উদার।
যেহেতু কাক মহোদয় সেক্রেটারি, তাই তার প্রতি শালিক পাখির বড় রিসপেক্ট। যখন যেভাবে হুকুম করে ঠিক সেভাবে শালিক পাখি নিজ কর্তব্য পালন করার চেষ্টা করে। অল্প সময়ের মধ্যে কাক মহোদয়ের প্রিয় বন্ধু হয়ে ওঠে। ঠিকঠাক চলছে সব। শালিক পাখির সহ-সেক্রেটারি পদে নিযুক্ত হবার এক বছরের মাথায়।
কিন্তু শালিক পাখির ইদানীং কেমন যেন মনে হয়। কাক মহোদয়কে আর পছন্দ হয় না। আজকাল একটু লোভের বশে বিভিন্ন ক্রাইমে জড়িয়ে পড়েছে। রাজাপাখি জানলে চাকরি নট করে দেবেন। সঙ্গে চরম শাস্তিও দেবেন। শালিক পাখি একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা। তার মাঝে জবাবদিহিতায় কোনো ভুল খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু কাক মহোদয়ের অনেক সমস্যা থাকে। শালিক পাখি প্রায় সমাধান করে দেয়।
সে জন্য বারবার বেঁচে যায়।
শালিক পাখি মনে মনে ভাবে।
বিষয়টি রাজাপাখির কানে দেবো। না না রাজাপাখির কানে গেলে হয়তো প্রিয় বন্ধুর চাকরি চলে যাবে। পরিবার পরিজনকে নিয়ে কেমন করে থাকবে সে। পথে পথে ঘুরবে তখন। ধৈর্য ধরি, আপনাআপনি যদি ঠিক হয়ে যায়। এ ভেবে সব কিছু গোপন রাখল।

একদিন রাজাপাখি কাক মহোদয়কে মোটা অঙ্কের অর্থ রাখতে দিলেন। কাক সেই অর্থগুলো অনায়াসে খরচ করে। আর চালাকি করে শালিক পাখির সিক্রেট ড্রয়ারে কিছু রেখে দেয়। এটা শালিক পাখি জানত না। রাজাপাখির জরুরি তলব। কিছু অর্থ প্রয়োজন। দ্রæত কাক মহোদয়কে ডাকো। কাক মহোদয় হাজির। রাজাপাখি অর্থ চাইতেই গম্ভীর কণ্ঠে বলে, অর্থ সব লুট হয়ে গেছে আমার ড্রয়ার থেকে।
– কী বলো এসব?
– জি রাজাপাখি আপনাকে বিষয়টা আরো আগে অবগত করা উচিত ছিল। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে।
– মানে?
আপনার বিশ্বস্ত শালিক পাখি এ কাজ করেছে। তার খুব লোভ রাজাপাখি।
– কী বলো এসব? না এমন হতে পারে না। তোমাদের ভুল হচ্ছে কোথাও। ভালো করে দেখো।
– না রাজাপাখি আমি স্বচক্ষে দেখেছি লুট করতে।
– ডেকে আনো শালিক পাখিকে।
– রাজাপাখি আমায় ডেকেছেন।
– হুম, আমার বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে এত কিছু?
– কী বলছেন রাজাপাখি? আমি কি কোনো ভুল করেছি?
রাজাপাখি বললেন, শুধু ভুল? ভুল না। তুমি বড় অন্যায় করেছ। বিশ্বাসঘাতক। কাক মহোদয়কে দেয়া অর্থ সব লুট করেছ।
– ছি! ছি! আস্তাগফিরুল্লাহ্! আস্তাগফিরুল্লাহ্
কী বলেন রাজাপাখি? আমি?
– হ্যাঁ তুমি।
– না, আমি লুট করিনি, বিশ্বাস করুন।
– আর বিশ্বাস। তাহলে অর্থ গেল কোথায়। এ সময় কাক মহোদয় বলল, হুজুর অফিস রুম সার্চ করা হোক।
রাজাপাখি বললেন, হুম, তাই করা হোক।
শালিক পাখি বলল- আচ্ছা বেশ, সার্চ করুন।
সার্চ করে শালিক পাখির সিক্রেট ড্রয়ারে পুরো অর্থই পাওয়া গেল। বড়ই আহাম্মক বেচারা। শালিক পাখির কিছুই বলার ছিল না। শালিক পাখির আর বুঝতে বাকি রইল না। কাজটি প্রিয় বন্ধু কাক মহোদয়ের।
বন্ধুর দিকে হাসিমুখে চেয়ে, হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। সবাই জেনে গেল শালিক পাখি লোভী।