মনসুবা জংশন

আবু নেসার শাহীন

0
166

ঠাৎ স্কুল বাসটা ব্রেক কষে থামে। ছাত্রছাত্রীরা সামনের দিকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কেউ কেউ প্রচ- ব্যথাও পায়। সুজন চেঁচিয়ে বলল, কী হল ড্রাইভার চাচা?’
ড্রাইভার রবিউল ঢোক গিলে বলল, সামনে তাকিয়ে দেখ। কারা যেন রাস্তার উপর গাছ কেঁটে ফেলে রেখেছে। আর একটু হলেতো গাড়ি এ্যাকসিডেন্ট করতো। কাদে পরে আমরা সবাই মারা যেতাম।
ড্রাইভারের কথা শনে সবাই সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি রাস্তার উপর বড় বড় গাছ কেঁটে ফেলে রাখা হয়েছে। ভয়ে সবাই এ ওর মুখের দিকে তাকায়। সবার চেহারায় আতঙ্কের চাপ ফুটে ওঠে। দুই কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের চূড়ায় তাদের স্কুল। রোজ এ পথ দিয়েই বাড়ি ফেরে তারা। সুজন ভয়ার্ত গলায় বলল, ড্রাইভার চাচা শ্রীঘ্রই বাবাকে একটা ফোন দেন।
ঠিক আছে, ড্রাইভার সুজনের বাবকে ফোন করে। সব শুনে সুজনের বাবা বললেন,একদম ঘাবরাবি না। আমি দেখছি কী করা যায়।

রাস্তার এক পাশে বিশাল পাহাড় অন্য পাশে গিরিখাদ। সরু নদী। আশপাশে কোনো বাড়ি ঘর নেই। একটু সামনে মনসুবা জংশন। এখন আর এ স্টেশনে কোনো ট্রেন থামে না। চারদিকে ভাঙ্গা দালান। রেললাইনের পাশ ঘেঁষে বিশাল বট গাছ। বট গাছের নীচে মাতি লালের টং দোকান। আজ দোকান বন্ধ। ঘটনা কী? সুজন বলল,‘বন্ধুরা কেউ ভয় পাবে না। ড্রাইভার চাচা চলুন আমরা আবার স্কুলে ফিরে যাই।’

গাড়ি পিছনের দিকে কয়েক গজ যেতেই দেখে পিছনে ও গাছ কেঁটে ফেলে রাখা হয়েছে। এদের ভিতরে মনোয়ার খুবই ভীতু। সে হাউমাউ করে কাঁদে। ড্রাইভার বলল, আমার মনে হয় কোনো দস্যু দলের কবলে পড়েছি।
চল গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পালাই আদনান বলল।
এখনো অনেক দূর এতটা পথ দৌঁড়ে যেতে পারবো? রাফি বলল।
তা অবশ্য ঠিক, সুজন দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
সময় গড়াতে থাকে। ওরা ক্ষুধায় তৃষ্ণায় অস্থির। ড্রাইভারের চোখে মুখে ভয়ের কোন চাপ নেই। হঠাৎ অস্ত্র হাতে কিছু লোক গাড়ির চার দিকে এসে দাঁড়ায়। এসময় ড্রাইভার দৌড়ে পালিয়ে যায়। একটা গোফ ওয়ালা লোক গাড়ির কাঁচে টোকা দিয়ে বলল, এই সবাই নামো। সবার বাসায় ফোন করেছি। পাঁচ লক্ষ টাকা করে আনতে বলেছি। যদি টাকা না নিয়ে আসে তাহলে তোমাদেকে নিঝুম দ্বীপে নিয়ে ফেলে দিয়ে আসবো। আর তোমাদের কেউ খুঁজে পাবে না।
‘আঙ্কেল কিছু খেতে দিবেন। আমার আবার ভয় পেলে ক্ষুধা লাগে।’ সজিব ঢোক গিলে বলল।
সজিবের কথা শুনে দস্যুরা হা হা হো হো করে হেসে উঠল। একজন দস্যু বলল, তোমরা আমাদের সর্দারের কথা শুনতে পাওনি? নামো গাড়ি থেকে!
এক এক করে সবাই গাড়ি থেকে নামে। লাইন দিয়ে দাঁড়ায়। এক সময় একটা রঙিন গাড়ি উড়ে এসে তাদের সামনে নামে এবং গাড়িটা ওলট-পালট হয়ে একটা রোবটে পরিণত হয়। এ দৃশ্য দেখে সবাই হতচকিয়ে যায়।
রোবট বলল, ভাল চাওতো এখান থেকে চলে যাও। তা না হলে তোমাদের কপালে দুঃখ আছে।
তুমি কিছুই করতে পারবে না চলে যাও দস্যু সর্দার বলল্।
সত্যি! রোবট সামনের দিকে এগুতে থাকে। সুজন ফিসফিস করে বলল, মনে হয় রক্ত ক্ষয়ি একটা যুদ্ধ হবে। চল আমরা সবাই মনসুবা জংশনে যাই।’
হ্যাঁ চল মতিউল বলল।
সবাই মনযুবা জংশনে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল। রোবট দস্যু সর্দারের পায়ে গুলি করে বসে। দুস্যু সর্দার চিৎকার করে ওঠে এবং চিৎকার করে বলল, এক্ষুণি গুলি করে রোবটটাকে গুড়িয়ে দে। হাঁ করে দেখদিস কী? ও জানে না আমাদের কত শক্তি?
সব দস্যুরা মিলে রোবটটাকে গুলি ছুড়তে থাকে। মুহূর্তে যুদ্ধ বেঁধে যায়। গুলি এবং পাল্টা গুলি চলে। অনেকক্ষণ কেঁটে যায়। রোবট বলল, আজ থেকে সবাই তোমাকে ল্যাংড়া সর্দার বলবে। কারণ তুমি আর কোনদিন দুই পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারবে না। এখন ও সময় আছে পালিয়ে যাও।
না আমরা পালাবো না। আমাদের মিশন কখনো ব্যর্থ হয় না। দস্যু সর্দার রাস্তায় শুয়ে কাতরাতে থাকে। থেমে থেমে গুলি এবং পাল্টা গুলি করে উভয়ই পক্ষ। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়। রোবটের শরীর ক্ষত বিক্ষত হয়। এভাবে চলতে থাকে।

এক সময় পুলিশ আসে। রোবট বলল, তোমরা বোধ হয় ধরা পড়ে যাচ্ছো।
দস্যু কালু কখনো ধরা পড়ে না। এই যে আমাদের দেখছো এটা আমাদের আসল রূপ না। কারণ আমরা সবাই মুখোশ পড়ে আছি।
ও… রোবট হাসার চেষ্টা করে। তোমাদের আসল সর্দার কোথায় তাকে দেখছি না যে?’
কে আমাদের আসল সর্দার? আমি আসল সর্দার।
পুলিশ গুলি ছুড়তে থাকে। এক সময় সব দুস্য ধরা পড়ে যায়। শেষ মুহূর্তে ড্রাইভার আসে। ড্রাইভার বলল, স্যার আামি রবিউল। আমিই ফোন করে খবর দিয়েছিলাম। তা না হলে আজকে অনেক বড় বিপদ ঘটতে পারতো।
রোবট এগিয়ে এসে রবিউলকে ধরে। রবিউল অবাক হয়ে বলল, আমি আবার কী করলাম?
আমি তোমার মোবাইলে আড়ি পেতে শুনেছি। তুমিই আসল দস্যু সর্দার। রোবট রবিউলকে কোলে করে গাড়িতে তোলে।
আমরা এতদিন তাহলে দস্যু সর্দারকে চিনতে পারিনি কেন? সুজন অবাক হয়ে বলল।
কারণ মানুষ চেনা সহজ না রোবট বলল।
তার কথা শুনে সবাই হেসে উঠল। রোবট একটু দূরে গিয়ে উলট-পালট হয়ে গাড়িতে পরিণত হয়। তারপর উড়ে চলে যায়। সবাই গাড়িতে ওঠে। পশ্চিম আকাশে লাল আভা ছড়িয়ে পড়ে। পাহাড়ি আকাবাঁকা পথ ধরে এগিয়ে চলে গাড়িগুলো। সুজন ও তার বন্ধুরা ক্লান্ত। তাই সবাই এখন ঘুমিয়ে।