পাহাড়ের আবডালে গুপ্তধন

জুবায়ের দুখু

0
117

পাহাড় আর পাহাড়ে ঘেরা কমলপুর গ্রাম। সেই গ্রামে বাস করতো এক বৃদ্ধ চাষি। বয়সের ভারে নুয়ে পড়ার কারণে তাকে কেউ কাজে ডাকে না তাই তার বেশির ভাগ সময় এখন আর কাজকর্ম থাকে না ঘরে বসে বসে ছেলেদের রোজগার করা অন্ন খায়। এতে বৃদ্ধের কটু কথা দুবেলা শুনতে হয়, দুই ছেলে অরুণ ও বরুণের বউয়ের মুখের। সারাদিন ঘরে বসে বসে শুধু ছেলেদের অন্ন ধ্বংস করছে এমন সব কথা বলে ছেলের বউয়েরা। তবু বৃদ্ধ বোবার মতো মুখ বুজে থাকে তবে এভাবে আর কতদিন? যতদিন যাচ্ছে ছেলের বউয়েদের কাছে যেনো সে বিষ আর আপদ হয়ে উঠছে। বৃদ্ধ তাই একদিন বিলাপ করে তার এক ব্যাংক কর্মকর্তা বন্ধুকে বিষয়টি খুলে বলে তার নিত্যদিনের ঘটনাবলি। বিষয়টি শুনে বৃদ্ধর বন্ধু তাকে একটি পরামর্শ দিলেন এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে বললেন।
দুই.
বন্ধুর পরামর্শ অনুযায়ী বৃদ্ধর কাজ শুরু করলেন একটি ব্যাগে কয়েকটি কাগজপত্র নিয়ে পাহাড়ের আবডালে শহরটাতে যাত্রা শুরু করলেন সকাল সকাল। ছেলের বউদের বললেন শহরে ব্যাংকে তার কিছু কাজ আছে ফিরতে রাত হবে তার জন্য যেন তার দু ছেলে অরুণ ও বরুণ কোনো চিন্তা না করে। শ্বশুরের ওই এমন কথা শুনে দুই বউয়ের মুখ কিছুক্ষণের জন্য রহস্যময় হয়ে উঠল। বৃদ্ধের বন্ধুর পরামর্শ অনুযায়ী তার ব্যাংকে গেল এবং তার সঙ্গে সারাদিন গল্পগুজব করে দিন কাটাতো আর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আসতো। এভাবে এখন প্রায় রোজ সপ্তাহে একদিন করে বৃদ্ধ পাহাড়ের আবডালে ব্যাংকটাতে ব্যাগ ভর্তি কাগজপত্র নিয়ে যাওয়া আশা করতে শুরু করল এবং নিজে নিজে একটি বুদ্ধি করে রাতের বেলা ঘরে বসে কাগজপত্র নিয়ে মিছামিছি হিসাবনিকাশ করতো যাতে তার ছেলের বউয়েরা ভাবে তার শ্বশুরের পাহাড়ের আবডালের ব্যাংকটাতে অনেক টাকাকড়ি জমা আছে।
তিন.
এভাবে দিন যেতে যেতে বৃদ্ধর দিনগুলো এখন সুখের হয়ে উঠেছে তার ছেলের বউয়েরা ভাবতে শুরু করেছে তার শ্বশুরের পাহাড়ের আবডালে ওই ব্যাংকটাতে অনেক টাকা পয়সা জমা আছে তিনার মৃত্যুর পর সব টাকা পয়সা তাদের হয়ে যাবে তাই স্বামীদের বলে বাজার থেকে ভালো ভালো মাছ যেমন ইলিশ রুই কাতলা আবার কোনো কোনো দিন মাংস পোলাও কোরমা রান্না করে শ্বশুরকে খাওয়ায় এক এক দিন একেক ছেলের বউ। এতে বৃদ্ধর মনে মনে হাসি পায় সামান্য স্বার্থের জন্য তার ছেলের বউয়েরা তাকে যেভাবে আপ্যায়ন করছে অথবা কয়েক মাস আগেও ছেলের বউদের চোখে এই বৃদ্ধ কালসাপ ছিল। সকালে বিকেলে যা ইচ্ছে তাই বলতো। দু’বেলা ভাত খেতো বলে, কিন্তু এখন তার উল্টো শুধু সামান্য স্বার্থের জন্য। তবুও যদি একদিন তার ছেলের বউয়েরা এই মিথ্যা ঘটনা জেনে যায় বৃদ্ধের দুখের সীমা রইবে না এ কথাও তিনি কখনো কখনো একা বসে ভাবে।
চার.
বিষয়টি আরো পরিষ্কার এবং গভীর করতে বৃদ্ধ এখন রোজ সপ্তাহে তার দু ছেলে সঙ্গে করে ব্যাংকে যান কিন্তু তাদের হাতে কাগজপত্রওলা ব্যাগটি দেয় না যদি তারা ব্যাগ খুলে কাগজপত্র দেখে ফেলে এভেবে। ছেলেদের ব্যাংকের নিচে রেখে সারাদিন বন্ধুর সঙ্গে গল্প করে বৃদ্ধ নিচে আসে আবার ছেলেদের সঙ্গে করে বাড়ি ফিরে আসেন। এভাবে দিন যায় বছর যায় বৃদ্ধ প্রায় শয্যাগত হয়ে ওঠে মৃত্যু দূত যাওয়া আশা করে বাড়ির আশপাশে যেকোনো সময় মৃত্যু হয়ে যেতে পারে এই ভেবে তার দুই ছেলের বউয়েরা ছেলেদের বলে যাও তোমার বাবার কাগজপত্র বুঝে নাও। বউয়েদের কথা মতো ছেলেরা বাবার সঙ্গে তার ব্যাংকের কাগজপত্রের বিষয় নিয়ে আলোচনা করে বৃদ্ধ বিছানায় শুয়ে মৃত্যুময়ী যন্ত্রণা নিয়েও ছেলেদের বলে তোমরা চিন্তা করো না আমি মরে যাওয়ার পর তোমাদের দু ভাইকে তোমাদের অর্থ ভাগ করে দিয়ে যাবে পাহাড়ের আবডালের ওই ব্যাংক। বাবার সঙ্গে আলোচনা করা কথা গুলো অরুণ ও বরুণ তার বউদের বলে, কথা গুলো শুনে বউদের যেন আর তর সয়ে না যেন বৃদ্ধ আজ মরলে কালকেই ব্যাংকের সম্পদ তারা ভাগ বাটোয়ারা করে নেবে।
পাঁচ.
শয্যাসঙ্গী বৃদ্ধ এক ভোরে মারা গেল দু ছেলে মিলে বাবার শেষ কাজ সম্পূর্ণ করল। বউয়েরা লোক দেখানো কান্নায় মিছামিছি গড়াগড়ি করতে লাগলো উঠানময়। বাবার মৃত্যুর তিন দিন পর বউদের কথামতো অরুণ ও বরুণ পাহাড়ের আবডালের ওই ব্যাংকে যায় এবং তাদের বাবার বন্ধুকে বিষয়টি খুলে বলে। বিষয়টি শুনে বৃদ্ধের বন্ধু খুব আফসোস করতে করতে বৃদ্ধর দুই ছেলেকে বলে তোমাদের বাবা দিনরাত খেটে তোমাদের বড় করেছে হাঁটতে শিখিয়েছে কথা বলতে শিখিয়েছে অথচ তার মৃত্যুর তিন দিন পর-ই তার সম্পদের খবর নিতে এসেছো কিন্তু দেখো তোমাদের বাবার যখন এই সম্পদ ছিল না তোমরা তার সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছো, আর তাই তিনি বিলাপ করে আমাকে সব ঘটনা খুলে বলে সে জন্য আমিই তাকে এই মিথ্যা বুদ্ধি দেই আসলে তোমাদের বাবার এই ব্যাংকে কোনো টাকা পয়সা জমা নেই। তিনি আমার বুদ্ধিতে কাগজপত্র নিয়ে ঘুরেছে তোমাদের আপন করে পাওয়ার জন্য। বাবার বন্ধুর এসব কথা শুনে বৃদ্ধের ছেলেরা সব ভুল বুঝতে পারে এবং তার পাপ মোচনের জন্য নিজের ব্যয়বহুল অর্থ খবচ করে বাবার সুখ কামনা করে; গরীবদের মাঝে খাবার বিলিয়ে দেয়।