নতুন বছরে নতুন স্বপ্ন

শাকের জামিল

0
37

নতুন বছর, নতুন সূর্যোদয়, নতুন সবকিছু। স্কুলে নতুন বই, নতুন পোশাক, নতুন ব্যাগ। অফিস, পাড়া, মহল্লায় নতুন উদ্যমে নতুন বছরকে বরণ এবং যাত্রা। বছর বছর কী সবকিছুই নতুন হয়? তুমি কি নতুন হও? আসলে কী হয়? গত বছর তুমি যা ছিলে আজ কি তাই আছো? তোমার দেহে গত এক বছরে কী কী পরিবর্তন এসেছে? একটু হিসেব করে নাও আমি বলছি। তোমার দেহে যা রক্ত আছে তার মধ্যে নিউট্রোফিল নাম কণিকা বদলেছে গড়ে ৩-৪ দিনে। ব্যাসোফিল কণিকা বদলেছে গড়ে দশ দিনে। ইসিনোফিল বদলেছে গড়ে তিন সপ্তাহে। লোহিত রক্ত কণিকা বা রক্তের লাল কণিকা বছরে ৩ বার বদলে গেছে।
পাকস্থলির ভেতরের আবরণ বদলেছে কমপক্ষে ৭০ বার। নতুন করে সেই আবরণ তৈরি হয়েছে বারবার যাতে তোমার পাকস্থলির দেয়াল এসিডে পুড়ে না যায়। লিভার ও যকৃতের কোষগুলো বদলে গেছে পুরোপুরি অথবা প্রায় দুই তৃতীয়াংশ। তোমার চামড়া বা ত্বকের বাইরের অংশ প্রায় প্রতি মাসে একবার করে বদলে যাচ্ছে। নতুন চামড়া পাচ্ছ প্রতিবার। অর্থাৎ দেহের একটি বড় অংশ বদলে যাচ্ছে। আর সেটা তোমার কল্যাণে। এটা দেহের পরিবর্তন। কিন্তু তোমার মনমানসিকতা এবং কর্মকান্ডে কি পরিবর্তন আসছে? তুমি কি নতুন গুণ অর্জন করতে পেরেছ? কিংবা নতুন দক্ষতা অথবা নতুন কোনো ভালো অভ্যাস? গত এক বছরে তোমার অর্জনগুলো কী কী? খাতা কলম নিয়ে বসে একটু চিন্তা করে লেখো সেগুলো। গত এক বছরে তোমার কী কী অর্জন হলো? পড়াশুনায় গত বছর কী কী ভালো ফল অর্জন করেছো?
যেমনÑ গত বছর আগের ও বছরের তুলনায় কী কী সাবজেক্টে ভালো রেজাল্ট করেছ? অথবা আগের বছর যে সাবজেক্ট বুঝতে কষ্ট হতো, গত বছর তুমি সেই কাঠিন্য পার হয়েছ, এখন সেই সাবজেক্ট তোমার কাছে সহজ মনে হয়? খেলাধুলায় কী কী সাফল্য পেয়েছ? পাড়াপড়শী বা আত্মীয় স্বজন তোমাকে নতুন কোনো পরিচয়ে চেনে কিনা? যেমনÑ তুমি আগের চেয়ে ভালো আচরণ করো, সবার খোঁজখবর রাখো, বিপদে আপদে এগিয়ে যাও ইত্যাদি। নতুন কোনো ভালো অভ্যাস কি আয়ত্ব করতে পেরেছ? যেমনÑ সকালে ঘুম থেকে ওঠা, নিয়মিত পাঠ্যবই ছাড়া অন্যান্য বই পড়া, নামাজ পড়া, নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা, নিয়মিত গোসল করা, নিজের কাজ নিজে করা, ঘর গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি। গত এক বছরে নিয়মিত কোন কাজটা করেছো? সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। গত একবছরে কোন কোন বন্ধুকে সাহায্য করেছো? কী কী প্রয়োজনে সাহায্য করেছো সেটাও লিখতে পারো। একই সাথে এটাও লিখতে পারো যে গত বছরের সেরা ভুলগুলো কী ছিল? কী কী বোকামী করেছো? কোন কোন ভুল সিদ্ধান্ত তোমার জন্য ক্ষতি বয়ে এনেছে? কোথায় কোথায় রাগ করে নিজের ক্ষতি নিজেই ডেকে এনেছো? কোন কোন বাজে অভ্যাসের কারণে তোমার কোনো সফলতা অর্জনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে? লিখতে থাকলে দেখবে তোমার নিজের ব্যাপারে একটা সুন্দর ধারণা তৈরি হয়েছে।
আমরা আসলে অন্যের কাজ কর্মের দিকেই তাকিয়ে থাকি। আর সেগুলোর সমালোচনা করতে থাকি। নিজের দিকে তাকানো হয় না, সমালোচনাও করা হয় না। আর এর ফলে নিজের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না। হযরত মুহাম্মাদ সা. বলেছেনÑ ধ্বংস তার জন্য যার আজকের দিনটি গতকালের চেয়ে ভালো হলো না। তিনি আরো বলেছেনÑ বুদ্ধিমান ব্যক্তি সে, যে নিজের সমালোচনা নিজে করতে পারে। সুতরাং নিজের ভুল ধরার চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই নতুন বছরে কী কী কাজ, কোন কোন স্বভাব বা অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে তা বুঝা যাবে।
বিগত বছরের অবস্থা পর্যালোচনা শেষে এবার নতুন বছরের জন্য কর্মতালিকা করতে হবে। সেটাও একই রকম। এই বছরে কোন কোন বিষয়ে তুমি সফলতা অর্জন করতে চাও তার তালিকা। লেখাপড়ায় আগের বছরের তুলনায় কেমন সফলতা অর্জন করতে চাও? খেলাধুলায় কেমন করতে চাও? সাহিত্য বা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে কেমন করতে চাও? অলিম্পিয়াড বা বিজ্ঞান মেলায় কী করতে চাও? তোমার ক্লাব বা সংগঠনে কী করতে চাও? পরিবারে কী করতে চাও? সবগুলো প্রথমে বিস্তারিত লিখতে হবে। বছর শেষে তুমি নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চাও সেটা চিন্তা করতে পারলেই চলবে। এক্ষেত্রে একটি বিষয় মনে রাখতে হবেÑ গত বছর তুমি কী করতে পেরেছ সেটা কোনোভাবেই তোমার সক্ষমতা বা পারদর্শিতার মানদন্ড নয়। গত বছর গণিতে ৫০ নম্বর পেয়েছ সুতরাং যদি ভাবো এ বছর তুমি বড়জোর ৬৫ নম্বর পাবে সেটা নিতান্তই ভুল ধারণা। তোমার চাওয়া বা আকাক্সক্ষা হতে হবে সর্বোচ্চ। যেমনÑ তুমি মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথাই বলতে ভয় পাও। তাহলে তুমি যদি নিজের সম্পর্কে ভাবো যে আমি কখনোই বক্তা/বিতার্কিক হতে পারবো না, সেটা ভুল ধারণা। ইচ্ছে রাখোÑ তুমি বিতার্কিক/বক্তা হবে। চেষ্টা করলে, সাহস রাখলে তুমি অবশ্যই হতে পারবে। অথবা তুমি ক্রিকেটে ব্যাটিং করতেই পারো না। বল আসতে দেখলেই ভয়ে ব্যাট ছেড়ে পালাতে ইচ্ছে করে। সাহস করো যে তুমি পারবে। ইচ্ছে রাখো। তুমি পারবেই। মানুষের সাথে মেশার বা কথা বলার ভয় আছে অনেকের। বাসায় কেউ এলে লুকিয়ে যাও তোমার রুমে। এই ভয় তুমি অতিক্রম করতে পারো এ বছরে। অনেকের সকালে ঘুমানোর অভ্যাস। কোনোভাবেই তোমার সকালে ওঠা সম্ভব হয়নি গত বছর, তার মানে এই নয় যে এ বছর তুমি পারবে না। সিদ্ধান্ত নাও, পরিস্থিতি তোমার পক্ষে চলে আসবে।
নিজেকে বদলানো বা নিজের ভালো করা কি সম্ভব নয়? আবার তাকাও নিজের দিকে। নিজের শরীরে প্রতি মিনিটে কী হচ্ছে জানো? প্রতি মিনিটে তুমি শ্বাস নিচ্ছ গড়ে ১৫ বার। এসময় প্রায় ৭ লিটার বাতাস নিচ্ছ তুমি। আর তা থেকে ফুসফুস ৪ লিটার অক্সিজেন রক্তের সাথে মেশাচ্ছে যা তৈরি করছে ১২০ মিলিয়ন রক্ত কণিকা। প্রতি মিনিটে তুমি ০.০০৬ লিটার কার্বনডাই-অক্সাইড ত্যাগ করছো যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তোমার হৃদপিন্ড মিনিটে ৭০-৮০ বার পাম্প করছে। প্রতি মিনিটে ৫ লিটার রক্ত সরবরাহ করছে হৃদপিন্ড। কিডনি প্রতি মিনিটে শোধন করছে ১.২ লিটার রক্ত। তোমার দেহে প্রতি মিনিটে ১০০ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। প্রতি মিনিটে ত্বক থেকে ঝরে যাচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ হাজার কোষ। ¯œায়ুতন্ত্র দিয়ে প্রতি মিনিটে যাচ্ছে ৮৬ বিলিয়ন সিগন্যাল। এই যে এত কিছু ঘটে যাচ্ছে প্রতি মিনিটে তোমারই শরীরে, সুতরাং একটি বছরে তুমি নিজের পরিবর্তন আনতে পারবে না! বিশ্বাস অর্জন করো এবং পরিকল্পনা করে কাজে মন দাও।
যা যা অর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছো তা এবার সংক্ষিপ্ত করে পয়েন্ট আকারে লিখে তোমার পড়ার টেবিলের সামনে বা তোমার রুমের দেয়ালে লাগিয়ে রাখো। প্রতিদিন তোমার পরিকল্পনার ছক দেখবে আর ভাববে কতদূর এগোলে তুমি। একটি কথা আছেÑ হাজার মাইলের যাত্রা শুরু হয় একটি মাত্র পদক্ষেপের মাধ্যমে। সুতরাং শুরু হোক তোমার নতুন বছরের নতুন স্বপ্ন নিয়ে দৃঢ় পথচলা।