ছোট্ট পাখির ছানার গল্প

মিনা মাশরাফী

0
41

রিদা, আদিব গল্প শুনছিল নানুর কাছে বসে বারান্দায় মাদুর পেতে। হঠাৎ আকাশে কালো মেঘে.হালকা বাতাস শুকনা পাতার ওড়াউড়ি, ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল বাতাস আর বৃষ্টির সাথে ছোট্ট পাখির ছানা থপ্ করে পড়ল ঠিক উঠানের কোণে কামিনী গাছের গোড়ায়। ভিজে জুপজুপ ছোট্ট পাখির ছানাটি।
বৃষ্টির মাথায় দৌড়ে ছানাটিকে তুলে নিয়ে আসে বারান্দায় আনন্দে চক্ চক্ করছে ওদের চোখ মুখ। নানীর পরামর্শে সেই থেকে পাখির ছানার যতœ আত্মিতে বেশ সময় কাটে দু’ ভাইবোনের। ছোট্ট পাখির ছানার খাবার বাটি আনে আদিব। পাখির ছানার ঠাÐা লাগছে দেখে রিদা নিজের মোজা নিয়ে এসে গায়ে পরিয়ে দিলো মাথাটা বাইরে রেখে। ছানা পিট্ পিট্ করে তাকিয়ে ওদের আদরের খুনসুটিতে উষ্ণ হয়ে উঠল। কিন্তু ভয়শঙ্কা কাটিয়ে ছানাটি পরদিন ঘরময় হেঁটে বেড়াতে লাগল। তুলতুলে পালকগুলোর রং যেন ফুটফুটে চক্মক্ করছে মাঝে মাঝে ইতিউতি চেয়ে চেয়ে দেখে। রিদা আদিব ঠোঁট ফাঁকা করে খাবার তুলে তুলে মুখে পুরে দেয়। বেড়ে উঠতে থাকে ছানাটি। ছানাটি যতœ আদর আপ্যায়নে, মা পাখির কথা ভুলতে থাকে একসময় বাড়ন্ত চেহারা আর পালকের রং দেখে চেনা যায়। নানু বললেন এটা শালিক পাখির ছানা।
রিদা আদিব নানা নানীর কাছে বায়না ধরেছে, পাখিটার নাম রাখতে হবে। বাবা বললেনÑ তোমরাই চিন্তা করে নাম রাখো। ওরা দু’জনে ভেবে চিন্তে নাম রাখলÑ সোনামৌ। এরপর কথা শেখাতে শত চেষ্টা ওদের দু’জনের।
একদিন সত্যি সত্যিই পাখিটি ডেকে উঠল রি..দা, আ..দিব বলে। রিদা, আদিবের সে কি আনন্দ !

সবাইকে খবরটা জানাতে হৈ-হুল্লোড় টেলিফোন সোনামৌ আমাদের নাম ধরে ডেকেছে। সোনামৌ এখন বেশ বড় পাখি হয়ে উঠছে দিনে দিনে, ওড়াউড়ির করতে শিখেছে।

রিদা আদিবের পিছু পিছু ছুটোছুটি করে, ডাইনিং টেবিলের আশে পাশে ঘোরে, বাগানে যায়, কিন্তু মজার ব্যাপার হলো দূরে কোথাও পালিয়ে যায় না, বাড়ির কাছেই থাকে। যেখানে সেখানে পায়খানা করে না। পোষা পাখিটি হয়ে গেল রিদা-আদিবের খেলার সাথী।

প্রতিদিন বিকাল বেলা সোনামৌ রিদা আর আদিবের সাথে বাসার সামনের মাঠে দোলনায় খেলতে যায়। দোলনার চারপাশে উড়ে উড়ে কিচিরমিচির ডাকে, গান গায়। খুব মজার সময় কাটছে রিদা আদিবের সোনামৌকে নিয়ে।

মা বললেনÑ রিদার এবার স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। এ কথা শুনে রিদামনির মন খারাপ হলো, সোনামৌকে রেখে স্কুলে যেতে মন চায় না মাকে বলল। মা বললেনÑ ঠিক আছে আদিবকেও প্লেতে ভর্তি করে করে দেয়া যাবে। সোনামৌ নানু ভাইয়ের সাথে তোমাদের স্কুলে দিয়ে আসবে এবং ছুটির আনতে যাবে। একথা শুনে রিদা খুশিতে টগবগ, দৌড়ে গিয়ে আদিবকে জানালো, নানাভাইকে খবর দিয়ে বলল, নানাভাই এখন আমাদের খুব মজা হবে। প্রতিদিন স্কুল থেকে এসে তোমার কাছে গল্প শুনবো, বিকেলে বেড়াতে যাবো আদিব সোনামৌ তুমি আর আমি।

রিদা আদিব স্কুলে ভর্তি হলো। সোনামৌ গাড়ির উপরে বসে থাকে ওদের স্কুলে যাওয়ার সময়। আবার গাড়ির সাথে বাসায় আসে।

একদিন স্কুলে গিয়ে গাড়ি থেকে ফুড়–ৎ করে উড়ে গিয়ে রিদার ক্লাসে ঢুকে পড়ে সোনামৌ। রিদা তো অবাক !
রিদা নিচু গলায় বলে সোনামৌ তুমি ক্লাসে এসেছ কেন?
সোনামৌ বলে আমি বই পড়বো। রিদার বন্ধুরা খুব মজা পেল সোনামৌয়ের কথা শুনে। ক্লাশে আসলো। সোনামৌ ক্লাসের দরজার ওপর গিয়ে চুপ করে বসে থাকল। শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের ছড়া শেখালেন। সোনামৌ ঠিক শিক্ষকের মতো করে ছড়া বলতে লাগলÑ
‘ঝিক্ ঝিক্ চলে রেল গাড়ি,
রেলগাড়িতে চড়ে আমি
পৌঁছে যাব বাড়ি ।’

শিক্ষক শুনে খুব খুশি হলেন। সবাইকে বললেনÑ বাহ্ ছোট্ট পাখিটি শুনে শুনে ছড়া শিখে ফেলেছে। রিদা বলল, ও ওর নামও বলতে পারে, গানও করতে পারে।
শিক্ষক রিদা আদিবকে আদর করে বলল- এটা বুঝি তোমাদের পোষা পাখি? রিদা আদিব বলল, সোনামৌ আমাদের বন্ধু পাখি নিজেই বলে উঠলÑ আমার নাম সোনামৌ। ভাইয়া আপু আমাকে গান শিখিয়েছে।
শিক্ষক বললেন, তাহলে শোনাও তোমার গান।
সোনামৌ বলে, সবাই একসাথে গাইবো…।
শিক্ষক বললেন, চলো সবাই একসাথে গান করতে করতে আমরা বাসায় চলে যাই।
স্কুল ছুটি হলো,
সবাই বাড়ি চলো।