গমন

মুসলিহা তাফহীম

0
74

মিতুল, এই মিতুল। উচ্চস্বরে ডাক দেয় মিতুলের নানী। কই গেলি ভাই, মিতুল? নাহ্ কোনো সাড়া নেই।
নদীতেই তো এলো। আমি বললাম যে, আমি সাথে করে নিয়ে যাব। তবু সে আগে আগেই চলে এলো। তার মা বলল। আট বছর বয়সী মিতুলদের বাড়ি নাটোর। পিতা শ্রমিক। তারা দুই ভাইবোন। পিতার অল্প আয়ে সংসার চালানো কষ্টকর বলে তার নানী তাকে নিজের কাছে এই বছরই দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীর পাশেই তার নানীর বাড়ি। গরু পালন করে বাড়ি বাড়ি দুধ দিয়ে তার নানীর সংসার চলে। এই বাড়ি বাড়ি দুধ দেওয়া কাজটা শিশু মিতুলের খুবই আনন্দের। যখনই নানীর বাড়ি বেড়াতে আসত,তখনই সে দুধের বোতল নিয়ে বাড়ি বাড়ি ছুটে বেড়াতো। এবার নানীর বাড়িতে এসে স্কুলে ভর্তি হলে সে তার নানীকে বলে, “নানী, তোমাকে এখন থেকে আর দুধ দিতে যেতে হবে না। প্রতিদিন আমিই যাব।”
অভ্যাসমত আজও মিতুল স্কুল থেকে এসে ভাত খেয়ে ব্যাগভর্তি দুধের বোতল নিয়ে বাড়ি বাড়ি দিয়ে আসে। এসে দেখে তার মা নাটোর থেকে নানীর বাড়ি এসেছে। সাথে অনেক খাবার। সে খুশিতে লাফাতে লাফাতে গোসল করতে নদীর দিকে ছুটল। এর পরপরই তার মা ও নানী নদী এসে তাকে আর খুঁজে পায়না।
“মিতুল, নদীতে ডুবে গেলি নাকি বাবা!” তার মা বিলাপ শুরু করে। আস্তে আস্তে নদীর তীরে গ্রামের মানুষ জড়ো হয়। তখন যোহরের সময় হয়ে গেছে। গ্রামের ছেলেরা সবাই নদীতে তাকে খুঁজতে নেমে পড়ে। এক সময়ের উত্তাল মহানন্দা নদী এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছে। নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে ছেলেরা বল খেলে, গরু চরে। আবার কোথাও কোথাও ধান চাষও হয়। প্রতি বর্ষাকালে নদীর সেই যৌবন ফিরে আসলেও এখন গ্রামের দামাল ছেলেরা হেঁটেই নদীর ওপারে চলে যেতে পারে। এই শুকনোপ্রায় নদীতে মিতুল গেল কোথায়?
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও তাকে খুঁজে পাওয়া গেল না। “পেয়েছি”, বলে চিৎকার করে একজন নদী থেকে কি যেন টেনে তুলে। নাহ্, এটি একটি কাদামাখা পুরনো জামা।
অবশেষে এক গর্তের মধ্যে আরেকজন তাকে খুঁজে পেল। হ্যাঁ, এইতো মিতুল। না ফেরার দেশে চলে গেছে। যে কিনা পড়ালেখার আশায় মায়ের কোল ছেড়েছিল, সেই শিশু মিতুল আজ জান্নাত লাভের আশায় পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল।
শিক্ষার্থী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ