অভিষেক সেঞ্চুরির ইতিহাস রচয়িতা আবিদ আলী

ওয়াহিদ আল হাসান

0
37

বিশ্বক্রিকেটে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে নতুন নতুন রেকর্ড। কেউ রেকর্ড গড়ছেন আবার কেউ সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন করে গড়ছেন। এই রেকর্ড ভাঙাগড়ার মাঝে এমন কিছু রেকর্ড তৈরি হয় যেগুলো একটু বেশি নাড়া বা দোলা দিয়ে যায়। তেমনি এক রেকর্ড সৃষ্টিকারী পাকিস্তানি ক্রিকেটার আবিদ আলী। তার সম্পর্কে কিছু জানতেই এবারের খেলার পাতায় থাকছে আয়োজন।

পাকিস্তানের বর্তমান কোচ ও প্রধান নির্বাচক মিসবাহ-উল-হক তখন জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকদের সমালোচনার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বলেছিলেন, যে বয়সে ক্রিকেটাররা অবসরের কথা ভাববে পাকিস্তানে সেই বয়সে তাদের অভিষেক করানো হয়। ২৭ বছরে মিসবাহর এবং ২৮ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেক হওয়া ইয়াসির শাহর জন্য কথাটি ছিল খুবই সত্য। সেই কথাটি ঠিক যেন মিলে গেল আবিদ আলীর সঙ্গেও। সম্প্রতি পাকিস্তান জাতীয় দলে তার অভিষেক হয়েছে ৩১ বছরেরও বেশি বয়সে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই ইতিহাসের পাতায় নাম লেখেন আবিদ আলী। গেল ২৯ মার্চ দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেট ম্যাচে ক্যারিয়ারের অভিষেকেই সেঞ্চুরি করেন আবিদ আলী। ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে ১৫তম ও পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের মধ্যে
তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এই রেকর্ড গড়েন তিনি। এর আগে ১৯৯৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়েন সেলিম ইলাহি এবং ২০১৭ সালে সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ইনজামাম-উল হকের ভাতিজা ইমাম-উল হক।

ওয়ানডে ক্রিকেটের অভিষেক সেঞ্চুরিয়ান আবিদ আলী তার অভিষেক টেস্টেও দেখান ব্যাটিং কারিশমা। গত ১৫ ডিসেম্বর রাওলাপিন্ডিতে খেলা সেই অভিষেক টেস্ট ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন তিনি। আর এরই মাধ্যমে প্রথম পুরুষ ক্রিকেটার হিসেবে গড়েন এক বিশ^রেকর্ড। অর্থাৎ প্রথম কোনো পুরুষ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ও ওয়ানডে উভয় ফরম্যাটের অভিষেক ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেন তিনি।
এর আগে ইংল্যান্ড নারী দলের ক্রিকেটার এনিড ব্যাকওয়েল প্রথম কোনো ক্রিকেটার হিসেবে এই কীর্তি গড়েছিলেন। ১৯৬৮ সালের ডিসেম্বরে অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়া নারী দলের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে করেছিলেন সেঞ্চুরি (১১৩ ও ৩৭)। টেস্ট অভিষেকের কয়েক বছর পর ১৯৭৩ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক নারী একাদশের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় এনিড ব্যাকওয়েলের। সেই ম্যাচে ওপেন করতে নেমে ১০১ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি।

এছাড়া আরো একজন নারী ক্রিকেটার ১৯৭৩ সালেই একই কীর্তি গড়ে দেখিয়েছিলেন। তবে পুরুষদের ক্রিকেটে এতদিন এমনটি হয়নি। ১৫ ডিসেম্বর রাওলাপিন্ডিতে পুরুষ ক্রিকেটার হিসেবে অনন্য এই রেকর্ড গড়লেন আবিদ আলী।

তিনি রেকর্ডের সিঁড়িতে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলেন ঠিক পরের টেস্টে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টেও সেঞ্চুরি পেয়ে যান আবিদ। ওয়ানডে এবং টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি করে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। এবার ক্যারিয়ারের দুই টেস্টেই সেঞ্চুরি করে ঢুকলেন এলিট ক্লাবে। পাকিস্তানের হয়ে সাদা পোশাকের ক্যারিয়ারে এমন দুর্দান্ত শুরু আর কারো হয়নি। গত ২১ ডিসেম্বর ঘরের মাঠে করাচিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টের তৃতীয় দিনে সেঞ্চুরি করেছেন আবিদ।

ক্যারিয়ারের প্রথম দুই টেস্টে সেঞ্চুরির কীর্তি আছে আরো আটজনের। আর প্রথম তিন টেস্টে টানা সেঞ্চুরির নজির আছে কেবল মোহাম্মদ আজাহারউদ্দিনের। অভিষেকের পর টানা দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করা প্রথম ব্যাটসম্যান ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার উইলিয়াম পন্সফোর্ড। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের আলভিন কালিচরণ, অস্ট্রেলিয়ার গ্রেগ ব্লেওয়েট, ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলি ও রোহিত শর্মা নিজেদের প্রথম দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করেছেন। আবিদের আগে সর্বশেষ এই কীর্তি গড়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের জিমি নিশাম।

পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান আবিদের কাছে টেস্ট অভিষেকটা দুটি কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। একদিকে প্রায় ১০ বছর পর পাকিস্তানে ফিরেছে টেস্ট ক্রিকেট; অন্যদিকে সেই ঐতিহাসিক ম্যাচেই নিজের অভিষেকে রেকর্ড গড়ে ফেললেন তিনি।

সর্বশেষ (২৯ ডিসেম্বর) তথ্য মতে, আবিদ আলী পাকিস্তানের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে মাত্র ৪টি ম্যাচ খেলে ১টি সেঞ্চুরি ও ১টি হাফ সেঞ্চুরিসহ সংগ্রহ করেছেন ১৯১ রান। টেস্টে মাত্র ২টি ম্যাচ খেলে ২টি সেঞ্চুরিসহ করেছেন ৩২১ রান। এদিকে ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত খেলার কারণে সুযোগ মেলে জাতীয় দলে। তথ্য মতে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০৭ ম্যাচে ২০টি সেঞ্চুরি ও ৩১টি হাফ সেঞ্চুরির সাহায্যে করেন ৭ হাজার ৩২৮ রান। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের ১০০ ম্যাচে ৬ সেঞ্চুরি ও ২৬টি ফিফটির সাহায্যে সংগ্রহ করেন ৩ হাজার ৬৬৩ রান। এছাড়া টি-টোয়েন্টির সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ৪৪ ম্যাচে ২ ফিফটির সাহায্যে করেন ৭৫৯ রান।